ভিডিও শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

গাছ বড় করার আনন্দ ও নিরাপদ ফল-মূল পেতেই বৃক্ষানুরাগীরা কিনছেন পছন্দের গাছ

গাছ বড় করার আনন্দ ও নিরাপদ ফল-মূল পেতেই বৃক্ষানুরাগীরা কিনছেন পছন্দের গাছ, ছবি : দৈনিক করতোয়া

হাফিজা বিনা : প্রতিটি স্টলে ঝুলছে বিভিন্ন প্রজাতির আম, পিংক কাঁঠাল, বেল, লটকন, মাল্টা, সুইট লেমনসহ বেশকিছু প্রজাতির ফল। আছে বনজ, ঔষধি, সৌন্দর্যবর্ধকসহ হাজারও প্রজাতির দেশি-বিদেশি গাছ। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে রয়েছে ৫০ হাজার টাকা দামের গাছও। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছাদ বাগানের জন্য ফলদ গাছ। ২য় অবস্থানে আছে ইনডোর প্লান্ট।

গত শনিবার বগুড়া শহীদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে বগুড়া জেলা প্রশাসন ও সামাজিক বন বিভাগের আয়োজনে বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। প্রথম দিন ভিড় কিছুটা কম থাকলেও দ্বিতীয় দিন বিকেল থেকেই জমে উঠেছে মেলা।

মেলায় ৩৫টি স্টলের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নার্সারি এবারের বৃক্ষ মেলায় দেশি-বিদেশি হাজারও প্রজাতির ফলদ, বনজ ও শোভাবর্ধক গাছের পসরা সাজিয়ে বসেছে। তবে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছাদ-বাগান ও ঘর সাজানোর গাছ। গাছের পাশাপাশি সবজি চারা, বীজ, সার, মাটি, টব বিক্রি হচ্ছে।

মেলা ঘুরে ফলদ গাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে বিভিন্ন প্রজাতির আম ও মাল্টার গাছ। ছোট ছোট গাছে দৃষ্টি কাড়ছে থোকায় থোকায় ধরে থাকা বিভিন্ন আকারের আম ও মাল্টা। এর মধ্যে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে কাঠিমন, খিরসা, আম্রপলি আমসহ গাছ।

দাম ১৫০ থেকে ৫শ’ টাকা। তবে বৃক্ষমেলায় অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের ও প্রজাতির বনসাই। মেলার অন্তত পাঁচ থেকে ৭টি  স্টলেই শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি এবং বিদেশী জাতের বনসাই। দৃষ্টিনন্দন এসব বনসাই দাম পড়বে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে বগুড়া সদরের কইপাড়া নারুলী বনসাই পল্লী, শিবগঞ্জের সাহিদা নার্সারী, সোনালী নার্সারী, মা-বাবা নার্সারী, সাবগ্রামের তৌহিদ নার্সারী, রেজুয়ান নার্সারী, বিএডিসি, টিএমএসএস, সুরভী নার্সারী, সবুজ কুড়ি, মা নার্সারীসহ আরও বেশ কিছু নার্সারী।

আজ সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আলী আসগরের সাথে কথা হয়  শিবগঞ্জের তাজ নার্মারীর সামনে। কয়েকটি আম গাছ নিয়ে দরদাম করছিলেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর বৃক্ষমেলা থেকে গাছ কেনেন। মেলায় আসা প্রতিটি গাছ সতেজ ও ভাল জাতের। তাই তিনি এবার মেলা থেকে কাঠিমন, নাগ ফজলি, হাড়িভাঙ্গা আম গাছ কিনলেন সাড়ে তিনশ’ টাকা দিয়ে।

গত বছর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বগুড়ার মহাস্থানের গোকুল এলাকার শুভ নার্সারীর স্টলকে ঘিরে মেলায় আগতদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। স্টলটির শোভা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রজাতির গাছ। রয়েছে আম, জাম, কাঠাল, লেবু, কমলা, আদা, এলাচ, চাইনিজ আইটেম রান্না করার বিভিন্ন বিদেশী সবজির গাছ, তেজপাতা, নিম, বিভিন্ন ধরণের সাকুলেন্ট, ইনডোর প্লান্টসহ প্রায় ১০ হাজার ওষধী, ফলদ ও বণজ গাছ নিয়ে মেলায় এসেছেন মোঃ আব্দুর রাজ্জাক।

আরও পড়ুন

তিনি জানান, প্রায় ১৫ বিঘা জমি নিয়ে তার শুভ নার্সারী। এখানে প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ,  ইনডোর, সাকুলেন্টসহ আরও অনেক গাছ আছে। মেলায় প্রায় প্রতিটি আইটেম আনার চেষ্টা করেছেন। হয়ত এর মধ্যে অনেক গাছ বিক্রি হবেনা। তবুও দর্শনার্থীদের এসব গাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এগুলো মেলায় নিয়ে এসেছেন।

মেলায় অংশ নেওয়া মেনহাজ নার্সারীর বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, তাদের এই স্টলে আউটডোর প্লান্টের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের উপকারী ইনডোর প্লান্ট রয়েছে। এসব ইনডোর প্লান্ট কিভাবে ঘরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং এর গুণাগুন তুলে ধরছি।

তিনি আরও বলেন, মানুষের কেনাকাটার ধরণ পাল্টে গেছে। আগে শুধুমাত্র কাঠের গাছ ও ফলের গাছ বিক্রি হতো। কিন্তু এখন ঘরের মধ্যে সবুজায়ন করার জন্য মানুষ অনেক টাকা খরচ করে। বড় গাছ লাগানোর মত জায়গা নেই শহুরে জীবনে।

তাই তারা ছাদের উপযোগী ফলজ ও সবজি জাতীয় গাছ ও  ইনডোর প্লান্ট কিনতে আসছেন। প্রতিটি ইনডোর প্লান্ট বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ২৫শ’ টাকায়। আশা করছেন এই ক’দিনে বেচাকেনা ভালোই হবে। মেলার বিক্রি নিয়ে নার্সারি মালিকেরা একটু মনোকষ্টে আছেন। বললেন প্রচারণা বেশি করতে হবে।

মেলার সময়ও বাড়াতে হবে। মেলায় কি ধরণের গাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে এবং কাঠ জাতীয় গাছ কম কেন সেই প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, শহরের মানুষ গাছ লাগানোর জন্য জায়গা কম থাকার জন্য কাঠের গাছ কম বিক্রি হয়। তারা আরও জানান, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন সাধারণত ছাদে লাগানোর উপযোগী ফলগাছ ও ঘরের শোভাবর্ধন করে এমন গাছ এই মেলায় বেশি বিক্রি হয়। অন্যদিকে এবার ফলের মধ্য আমগাছ বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

মেয়ে রাইসাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন ফৌজিয়া আকতার। জানালেন প্রতিবছরই বৃক্ষমেলা থেকে নানা রকম গাছের চারা কেনেন। শ্বশরবাড়ি থেকে পাওয়া জায়গাতে একটা ছোটখাট বাগান গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। যেভাবে ফলমূলে বিষ দেয়া হয় তাতে করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা একটা সুস্থ ফল খেয়ে পুষ্টি পেতে পারবে না।

সন্তানদের গাছ চেনানোর জন্য গাছ কেনা হয়। এছাড়াও চারা গাছ বড় করে তোলার একটা আলাদা আনন্দ আছে বললেন তিনি। এমন আনন্দ ও নিরাপদ ফল-মূল পেতেই বৃক্ষানুরাগীরা আসছেন বৃক্ষমেলায় গাছের চারা কিনতে। তাদের এই আনন্দ দেশের প্রকৃতিকে সবুজ করে তোলার ক্ষেত্রেও রাখছে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বেক্সিমকোর কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

পাকিস্তান থেকে সেই জাহাজে এবার এল ৬৯৯টি কনটেইনার

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছাড়াল ১ লাখ

গাজীপুরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত

আসামিকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর হামলা, অতঃপর গ্রেপ্তার ১৩

বগুড়ার কলোনীতে ছুরিকাঘাত করে ১০ লাখ টাকা ছিনতাই