ট্রেন নেই হাজারো মানুষের দুর্ভোগ, বিকল্প যানে যাতায়াতে গুনতে হচ্ছে বেশি টাকা
নাসিমা সুলতানা ছুটু : ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন বগুড়া শহরে আসতে হয় টপিকে। তালোড়া থেকে বগুড়ায় যাতয়াতের সহজ বাহন ট্রেন। তাই বগুড়ায় তিনি যাতয়াত করেন ট্রেনে। ট্রেনে যাতয়াতে তার খরচ পড়ে মাত্র ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা।
ট্রেন না পেলে সিএনজিতে যাতয়াত করতে তার খরচ পড়ে প্রায় ১শ’ টাকার মত। টপির মত সান্তাহার থেকে সপ্তাহে প্রায় ৫দিন বগুড়ায় যাতায়াত করতে হয় নাজমা বেগমের। সান্তাহার স্টেশনের পাশেই বাড়ি হওয়ায় এবং খরচ কম পড়ায় ট্রেনেই যাতয়াত করেন নাজমা বেগম। মেইল বা লোকাল যে ট্রেনেই যাতয়াত করুন না কেন পঞ্চাশ টাকার মত তার পড়ে। সেখানে বাসে বা অন্য বাহনে যাতয়াত করলে খরচ পড়ে ২শ’ টাকার মত।
কিন্তু চলমান কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সিএনজি বা বাসে করে বগুড়ায় আসতে হচ্ছে বলে জানান নাজমা বেগম। ট্রেন বন্ধ থাকায় বগুড়ায় যাতয়াতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাই এই ক’দিনের মধ্যে মাত্র একদিন তিনি বগুড়ায় আসতে পেরেছিলেন। একই কথা জানান টপি। তিনি বলেন ট্রেন বন্ধ থাকায় বগুড়ায় কাজ থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হচ্ছে না। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হলে আবার আগের মত বগুড়ায় যাতয়াত করবেন।
ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী ষাটোর্ধ্ব জমিলা বেগম (মতির মা নামে পরিচিত)। শাক-কচু বিক্রি করেই তার জীবন চলে। আগে বগুড়া শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। বয়স হওয়ায় এখন আর তাকে কেউ কাজে নিতে চান না। তাই বামনডাঙ্গা নিজ গ্রামে অন্যের জমি বা ভিটে-মাটিতে শাক-কচু যখন যা পান তখন তাই তুলে শহরে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।
বামনডাঙ্গা থেকে প্রতিদিন সকালের ট্রেনে চড়ে আসেন মতির মা। কখনও বিকেল কখনওবা সন্ধ্যার ট্রেনে চড়ে আবার বাড়ি ফিরে যান। ট্রেনে যাতয়াতে কখনও ট্রেনের ভাড়া দেন কখনওবা বয়স্ক গরিব মানুষ বলে তাকে ট্রেনে দায়িত্বে থাকা টিটিই ছেড়ে দেন। তবে চলমান সহিংসতার কারণে প্রায় এক সপ্তাহ আগে শহরে শাক বিক্রি করতে এসেছিলেন এরপর ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। শহরের কাটনারপাড়া এলাকার তার পরিচিত একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় গত ২০ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনে যাতয়াতকারী হাজার হাজার মানুষ বিপদে পড়েছেন। বিশেষ করে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নি¤œ আয়ের মানুষ। যাদের একমাত্র বা প্রধানতম বাহন ট্রেন। এদিকে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যাত্রী, হকারদের চিরচেনা স্টেশনে এখন চলছে সুনশান নিরবতা।
আরও পড়ুনজানা গেছে, বগুড়া স্টেশন থেকে সান্তাহার এবং বোনারপাড়ায় প্রতিদিন ৬টি লোকাল ট্রেন যাতয়াত করে। এসব ট্রেনে প্রায় ৫শ’ থেকে ৬শ’ যাত্রী যাতয়াত করে। বগুড়া স্টেশন মাস্টার সাজেদুর রহমান জানান, বগুড়া থেকে পদ্মরাগ সকাল ৭টা ৪৪ মিনিটে সান্তাহারের উদ্দেশ্যে যায় ওই ট্রেনই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সান্তাহার থেকে ছেড়ে এসে বগুড়া হয়ে বোনারপাড়া যায়।
বোনারপাড়া থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় কলেজ ট্রেন বগুড়া স্টেশনে পৌঁছে সান্তাহারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সান্তাহার থেকে ওই ট্রেনই রাত ৮টায় ছেড়ে বগুড়ায় স্টেশনে রাত ৯টায় পৌঁছে বোনারপাড়ার উদ্দেশ্যে যায়। টুয়েন্টি ডাউন ট্রেন সকাল ১১টায় বগুড়া স্টেশনে পৌঁছে সান্তাহারের উদ্দেশ্যে যায়। সান্তাহার থেকে ওই ট্রেন বিকেল সোয়া তিনটায় ছেড়ে বিকেল সাড়ে ৪টায় বগুড়া স্টেশনে পৌঁছে বোনারপাড়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
সাজেদুর রহমান আরও জানান, সিএনজি বা বাসের তুলনায় ট্রেনের খরচ অনেক কম বলে অনেকেই ট্রেনে যাতয়াত করেন। এছাড়া যাদের বাড়ি স্টেশন সংলগ্ন তারাও ট্রেন যাতয়াতকেই বেছে নেন। বগুড়া থেকে সান্তাহারে যেতে লোকাল ট্রেনের ভাড়া ১২টাকা এবং মেইল ট্রেনের ভাড়া ২০টাকা পড়ে।
অপরদিকে বোনারপাড়া যেতে লোকাল ট্রেনের ভাড়া ১৩ টাকা এবং মেইল ট্রেনের ভাড়া ২৫ টাকা পড়ে বলে তিনি জানান। প্রতিদিন বগুড়া স্টেশন থেকে ৫শ’ থেকে ৬শ’ যাত্রী বিভিন্ন স্থানে যাতয়াত করেন বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য করুন