নেট দুনিয়ায় ‘ঘোস্টিং’ বহুল আলোচিত একটি বিষয়
লাইফস্টাইল ডেস্ক: কারও সাথে খুবই সখ্যতা। তারপর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই মানুষটা আর যোগাযোগ রক্ষা করলো না। এই সময়ে বুঝতে পারলেন আপনি ‘ঘোস্টিং’য়ে শিকার হয়েছেন। সেই মানুষটা হয়ত আর কখনও আগের মতো আচরণ করবে না। এই বিষয়টা যে বর্তমান সময়ে ঘটছে তা কিন্তু নয়। আদিকাল থেকেই বিদ্যমান।
সিএনএন জানায়- নেট দুনিয়াতে ২০১০ সালের মাঝামাঝিতে ‘ঘোস্টিং’ বিষয়টা সাধারণভাবে পরিচিতি পায়। এই বিষয়ের ওপর ডা. ভিলহারের তৈরি করা প্রতিবেদন জনপ্রিয়তা পায় ২০১৫ সালে। মারিয়াম ওয়েবস্টার ২০১৭ সালে ডিকশনারিতে শব্দটি যোগ করে। আর বিষয়টা গুগল সার্চে প্রথম সারির দিকে উঠে আসে ২০১৯ সালে। ডা. ভিলহার মন্তব্য করেন, ঘোস্টিং’ নিয়ে এখন বহু লেখা পাওয়া যায়। তারমানে এই নয়, এই প্রতারণায় ব্যথা পাওয়া যায় না।
মানুষ সাধারণভাবেই একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকতে চায়। আর প্রতারিত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যে কারণে হয়ত নিজের সম্পর্কে মূল্যায়নের মাত্রা পাল্টায়। এই ব্যথা শারীরিক ব্যথার মতোই কষ্টকর- বলেন ‘থিংক ফরওয়ার্ড টু থ্রাইভ। প্রত্যাখ্যানের কারণ সঠিকভাবে প্রকাশ না করাই ‘ঘোস্টিং’। এগিয়ে যেতে আর কাছে আসার জন্য যেসব বিষয় দরকার সেসবের অনুপস্থিতিতে মানুষ শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করে। ফলে বন্ধুত্ব বা প্রেমের জন্য সে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে। এই সময়ে যে ‘ঘোস্টিং’ করে সে হয়ত এক ধরনের অপরাধ বোধের পাশাপাশি মুক্তির স্বাদ অনুভব করতে পারে- ব্যাখ্যা করেন এই বিশেষজ্ঞ। যে কারণে মানুষ ‘ঘোস্ট’ হয়। মরে গিয়ে ভূত হওয়ার মতো বিষয় এটা নয়। বরং প্রযুক্তির এই সময়ে মানুষ অনেক সময় অমানুষের মতো আচরণ করে।
অনেকে অন্যদের আচরণে বিরক্ত হয়ে, নিজেকে গুটিয়ে নেয় যাতে আর বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে না হয়। ডেটিং অ্যাপ’য়ে কোনো ব্যক্তিকে এড়ানোর সরল প্রক্রিয়া হল ‘ঘোস্টিং’ করা। কারণ এখানে বহুজনের সাথে যোগাযোগ হওয়ার ব্যাপার থাকে। ফলে যাকে ভালো লাগবে না, তাকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে সাধারণ বিষয়’ একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়া’র মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডা. রিচ স্ল্যাচার। যে যত অপরিচিত তাকে এড়ানো ততই সহজ, বিশেষ করে সম্পর্কের প্রাথমিক পর্যায়ে।
কিছু মানুষের পরিপক্কতা ও সহানুভূতির অভাব থাকে। কারও থাকে অপছন্দের বা এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়। যে কারণে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে। ফলে কেউ যদি ‘ঘোস্টিং’ করে তবে বুঝে নিতে হবে সে দ্বন্দ্ব এড়াতে এরকম করছে- ব্যাখ্যা করেন স্ল্যাচার। আবার অনেকে নিজের ইচ্ছায় এই কাজ করে না। অনেক সময় অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার মানসিক অবস্থা থাকে না। ফলে প্রতিউত্তর আর দেওয়া হয় না।
স্ল্যাচার বলেন, “কেউ কেউ বার্তা লেখার ক্ষেত্রেও ভয়ানক দুর্বল। তারা একসাথে সব কাজ করতে পারে না।” ভিলহার বলেন, “অনেকে উপলব্ধি করতে পারেন না, তাকে এড়ানো বা ‘ঘোস্টিং’ করা হচ্ছে। তাই বন্ধুত্ব বা প্রেমময় সম্পর্ক শেষ করতে চাইলে, অপর পক্ষকে সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে। এর ফলে সে বিষয়টা নিজের মধ্যে উপলব্ধি করতে পারবে।” তবে ‘ঘোস্টিং’য়ের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কারণ হল, যদি বুঝতে পারা যায় সেখানে অন্যায় আচরণ পাওয়া বা যোগাযোগ চালিয়ে গেলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
আরও পড়ুন‘অনেক সময় দেখা যায়, একজন হয়ত অন্যজনকে প্রত্যাখ্যান করতে চাইছে। তবে প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তি সেটা মানতে নারাজ, আর সে আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে। সেটা থেকে বাঁচতে সেই একজন ‘ঘোস্টিং’য়ের আশ্রয় নেয়’-
যার কাছ থেকে অযাচিত ব্যবহার পাওয়া যাবে তার সাথে ‘ঘোস্টিং’ করাটা যুক্তি সঙ্গত। যেমন- বাজে ছবি পাঠানো, কর্মক্ষেত্রে এসে হাজির হওয়া, পরিচিত কেউ প্রাক্তনের সাথে যোগাযোগ রেখেছে বা যে ব্যক্তিসীমা অতিক্রম করছে। তবে দুয়েক দিনের পরিচয়ে কাউকে ‘ঘোস্টিং’ করাটা ঠিক না বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞরা। এই ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত আচরণ হলে, ছোট বার্তা পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া, ‘পরিচয়ের বিষয়টা ভালো ছিল। তবে ভেতর থেকে আমি সাড়া পাচ্ছি না।’
যদি কারও সাথে ‘ঘোস্টিং’ আচরণ করতে হয়, তবে নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত- বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে এই পন্থা কি কার্যকর নাকি সমস্যা বাড়বে? উত্তরেই বলে দেবে কী করণীয়।
‘ঘোস্টিং’য়ের শিকার হলে যা করা উচিত: যদি কেউ আপনাকে এড়ায় তবে সেটা নিয়ে পড়ে থাকা উচিত হবে না। কারণ সেই ব্যক্তি হয়ত আপনাকে নিয়ে আর ভাবছে না। বলা যত সহজ করাটা হয়ত ততই কঠিন। তবে মনোযোগ সরিয়ে রাখতে পৃথিবীতে হাজারও জিনিস রয়েছে। যেমন- নিজের যত্ন নেওয়া, ব্যায়াম করা, গান শোনা, নিজের কোনো শখ মেটানো ইত্যাদি। কারও কাছ থেকে ‘ঘোস্টিং’য়ের শিকার হলে নিজের মধ্যে শূন্যতার অনুভূতি জন্ম নেয়। এক্ষেত্রে অন্যান্য বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত। জীবনের অন্যান্য অংশগুলো গুরুত্ব দিতে হবে, যেগুলো নিজের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করবে।
ভিলহার পরামর্শ দেন, যে আপনাকে চাচ্ছে না তার সাথে জোর করে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। মনে সান্ত্বনা পেতে দুয়েকবার হয়ত প্রশ্ন করা যেতে পারে- কেনো এরকম করছে? তবে নিজের ভালোর জন্য এক্ষেত্রে দাবি ছেড়ে দেওয়াই হবে স্বাস্থ্যকর আর বুদ্ধিমানের পরিচয়।
মন্তব্য করুন