তরুণ প্রজন্মের কাছে ভিউ পাওয়াই যখন মূল লক্ষ্য!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যে কোন ভিডিওতে এখন মূল লক্ষ্য হলো ভিউ বাড়ানো। যে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের ভিউ যতো বেশি যে ততো বেশি ভাইরাল। শুধু তাই নয়, এনাদের চাহিদাও ততো বেশি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আবার কিছু ফুড ব্লগার।
তরুণ মানেই নতুনত্ব। তারাই বাংলাদেশকে একদিন প্রতিনিধিত্ব করবে । তাদের নিজ থেকে কিছু হয়ে ওঠার ইচ্ছা নিঃসন্দেহে অভিনন্দন জানানোর মতো।
তবে সেই কিছু করার ইচ্ছা থেকে যখন ভিউয়ের পেছনে ছোটা হয় তখন সেই চিত্রটি হয় করুণ। বর্তমানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিউয়ের জন্য মানহীন কন্টেন্ট ও অশ্লীল বাক্যের প্রয়োগ। শুধু তাই নয়, ভাইরাল হওয়া লোকজনের পেছনে ছুটে তাদের ইন্টারভিউ নিয়ে তারাও এখন ভাইরাল হতে চায়। এতে যেমন ভিউয়ের গুরুত্ব বাড়ছে তেমনি কমছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধুর্য্য। তাহলে এখন প্রশ্ন, ভিউ পাওয়াই যখন মূল লক্ষ্য তখন মানের গুরুত্ব কতটুকু?
ফেসবুকে রিলস নামে স্বল্প সময়ের ভিডিও ফিচার যুক্ত হয়েছে। শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কিংবা পারিবারিক দৈনন্দিন কাজ ভিডিও আকারে ধারণ করে প্রচার করছে। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে ভাইরাল হওয়ার নেশায় তরুণেরা অপসংস্কৃতি দিকে ঝুঁকছেন।
ফলোয়ার আর ভিউয়ের নেশায় ভিডিওতে অশালীন কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিতে অশ্লীলতার দিকে ইঙ্গিত করছেন। এসব দেখে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছেন অনেক তরুণ, আসক্ত হচ্ছেন ডিজিটাল ডিভাইসে। ফলস্বরূপ, তরুণদের উন্নত রুচিসম্মত চিন্তাভাবনার পরিবর্তে নিচু মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।কিছু ভিউ বা লাইক শেয়ার কখনোই প্রতিভা বা শিক্ষার মাপকাঠি হতে পারে না।
আরও পড়ুনশুধু তাই নয়, কিছু মানুষ ফেসবুক, টিকটক ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা পাবার জন্য এসব অদ্ভুত কাজ করে থাকে। যা ক্রমশ সমাজে এক ধরনের ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ১৫-৩০ এর মধ্যে। তাদের জগতের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ভাইরাল কন্টেন্ট। এখন প্রশ্ন তাহলে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কোন দিকে এগোচ্ছে?
এই ভিউয়ের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে অনেক তরুণ এখন পড়া-শোনা এমনকি পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন এমনকি জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কাজে। কেউ হয়েছেন টিকটকার আবার কেউ সদস্য হয়েছেন কিশোরগ্যাংয়ের।
সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। তরুণদের মধ্যে এ হার আরও বেশি, প্রায় ৯০ শতাংশ। গণমাধ্যমে তথ্যের বিপণনের সাবেকি প্রথা এখন আর নেই। দেশে-বিদেশে কি ঘটছে সেগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের আধুনিক জীবনে এক নতুন বাস্তবতা। তাদের ছেলেমেয়েরা কি পরিমাণ সময় ব্যয় করছে ফেসবুকে, পর্নোসাইট ভিজিট করছে কিনা, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। পৃথিবীতে সমতালে পথ চলতে পারাটাই নিজের মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ।
মন্তব্য করুন