বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা কি সুভংকরের ফাঁকি?
আজকের তরুণ আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে যাদের ওপর নির্ভর করে আমরা স্বপ্ন দেখি তা হলো আমাদের তরুণ সমাজ। তবে এখনকার বেশিরভাগ তরুণের স্বপ্ন অন্য দেশে পারি জমানোর।
কিন্তু কেন এখন বেশিরভাগ তরুণ দেশ ছাড়তে চান? দৈনিক করতোয়া থেকে তরুণদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তাদের মাঝে বেকারত্ব নিয়ে দেখা যায় এক প্রকার হতাশার ছাপ।
তরুণদের মতে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরেও মিলছে না কাঙ্খিত চাকরি। আবার অনেক তরুণ মনে করেন অনিয়মের ভিড়ে যোগ্য এখন অনেকেই বেকার বসে আছেন। তাই দক্ষ লোক থাকলেও নেই দক্ষতাকে কাজে লাগানোর জায়গা। ২০২৩ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসেবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ। এই বেকারদের মধ্যে ১৬ লাখ ৭০ হাজার পুরুষ আর আট লাখ ৩০ হাজার নারী।
এই তরুণদের মতো ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ হয়তো অনেকের আছে। তাদের অনেকেই দেশ থেকে ‘মুখ ফিরিয়ে’ বিদেশে থাকার চিন্তা করছেন। গত ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড জাস্টিস সেন্টারের ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে ২০২৩’ শীর্ষক যৌথ সমীক্ষায় আরও ‘ভয়াবহ’ তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের ৫ হাজার ৬০৯ তরুণ-তরুণীর মধ্যে পরিচালিত ওই জরিপ বলছে, শিক্ষিত তরুণদের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বা ৪২ শতাংশ দেশ ছাড়তে চান।
একটা সময় ছিল কাজের জন্য প্রবাসী কর্মীদের বড় গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্য। দলে দলে মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন। এই প্রবাসী কর্মীদের অনেকে কম শিক্ষিত ছিলেন। কারিগরি দক্ষতাও থাকতো না অনেকের।
ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত অনেক দেশে শিক্ষা বা কাজের জন্য ছুটছেন বাংলাদেশিরা। তাদের একটা বড় অংশই তরুণ। এখন সব থেকে বড় উদ্বেগের বিষয় এটিই। পুরো একটা জেনারেশন বড় হচ্ছে দেশ ছাড়ার প্রবল ইচ্ছে নিয়ে। ইইউএ’র পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালেই সর্বাধিক সংখ্যক বাংলাদেশি ইইউ প্লাসে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। যা রীতিমতো রেকর্ড গড়ে ফেলেছে।
আরও পড়ুনবিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. এ কে এস মুরশিদ বলেন, ‘দেশে ছদ্ম বেকারত্ব আছে। যেমন কৃষিজমিতে যেখানে ৫ জন লোক দরকার সেখানে ১০ জন কাজ করছেন। মৌসুমি বেকারত্ব আছে। যারা হয়তো বছরে পাঁচ-ছয় মাস কাজ পান। তাই একটি প্রান্তিক দিয়ে বাস্তব অবস্থা বোঝা যায়না। এটা সারা বছরের গড় দিয়ে বোঝা যায়।’
তিনি আরও বলেন,‘ বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। চাহিদা আছে কিন্তু দক্ষতা না থাকায় তারা কাজ পাচ্ছেন না। তাই বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পে প্রচুর বিদেশি দক্ষ লোক কাজ করেন। দেশের শিক্ষিতরা ওই কাজ পারলে নিশ্চয়ই প্রাধান্য পেতেন।”
তাহলে এখন প্রশ্ন আমাদের বাংলদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কি হূমকির মুখে?
লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। তাহলে বাংলাদেশের এই উচ্চ শিক্ষার মান আসলে কোথায়? নাকি সব কিছুই সুভংকরের ফাঁকি? এখন প্রশ্ন একটাই, আর ১০ বছর পর এই তরুণ সমাজ আমাদের জন্য গর্বের হবে নাকি জন্ম দিবে সুপ্ত আক্ষেপের?
মন্তব্য করুন