ভিডিও

পানি পান করার সুন্নত সমূহ

হাফেয মিজানুর রহমান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৬:৩৯ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৬:৩৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

দৈনন্দিন জীবনে পানির প্রয়োজন অপরিসীম। পানি ছাড়া আমরা বাঁচতেই পারি না। অজু গোসল করতে গেলেও পানির বিশেষ প্রয়োজন। পৃথিবীর সকল জীবজন্তু  পানি না খেয়ে বাঁচতে পারে না। জমি চাষাবাদেও পানি লাগে হিসেব ছাড়া। মহান আল্লাহ তায়ালার পানির এ নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা অসম্ভব। টাকাপয়সা ছাড়া ফ্রিতেই পানি দিচ্ছেন আমাদের রব।

আর মহান আল্লাহই পানির সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করি পরিমিতভাবে, অতঃপর আমি তা ভূপৃষ্ঠে সংরক্ষণ করি, আমি তা অপসারিত করতেও সক্ষম। ’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১৮) সুস্থ জীবনযাপনে নিয়মিত পানি পান করা অপরিহার্য। হাদিসে পানি পান করার সুন্নত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো।

শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া : জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ ও খাবারের সময় আল্লাহকে স্মরণ করবে, তখন শয়তান বলে, এখানে তোমাদের রাত্রিযাপন ও খাবারের কোনো সুযোগ নেই। আর ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত্রিযাপন করতে পারবে। আর খাবারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে রাত্রিযাপন ও খাবার উভয়টি পেয়েছ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০১৮)

বসে পান করা : রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০২৪) তবে জমজমের পানি রাসুল (সা.) দাঁড়িয়ে পান করেছেন। যেমন ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন যে নবী করিম (সা.) জমজমের পানি একটি বালতি থেকে দাঁড়িয়ে পান করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬১৭)

ডান হাতে পান করা : হাফসা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) ডান হাতকে পানাহার ও কাপড় পরিধানের জন্য ব্যবহার করতেন এবং বাম হাতকে অন্য কাজে ব্যবহার করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩২)

পাত্রে শ্বাস না ফেলা : ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে বা ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৮৮৮)

তিন শ্বাসে পান করা : আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন শ্বাসে পানি পান করতেন। পাত্র মুখের কাছে আনলে বিসমিল্লাহ পড়তেন। আবার সরিয়ে নিলে আলহামদুলিল্লাহ পড়তেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন। (তাবারানি, হাদিস : ৮৪৭)

পাত্রের মুখ দিয়ে পান না করা : বড় পাত্রের মুখে মুখ দিয়ে পান করা অনুচিত। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বড় পাত্রের মুখে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।

সোনা ও রুপার পাত্রে পান না করা : সোনা ও রুপার পাত্রে পানাহার করতে বারণ করা হয়েছে। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মিহি ও মোটা রেশম জাতের কাপড় পরিধান করো না। সোনা ও রুপার পাত্রে পান করো না এবং এর বাসনেও আহার করো না। কারণ এসব দুনিয়ায় কাফিরদের জন্য এবং পরকালে তোমাদের জন্য।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৩২)

পরিবেশনকারী শেষে পান করবে : আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দলের মধ্যে পানি পরিবেশনকারী সবার শেষে পান করবে।’ (সহিহ মুসলিম হাদিস : ৮১৬)

রাতে পানাহারের পাত্র ঢেকে রাখা : জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পাত্রগুলো ঢেকে রাখো। পাত্রগুলো বন্ধ করে রাখো।

সবশেষে আল্লাহর প্রশংসা করা : পান করার পর আল্লাহর প্রশংসা করা সুন্নত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যে খাবার গ্রহণের পর তাঁর প্রশংসা করে কিংবা পান করার পর তাঁর প্রশংসা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫০২২) মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল আমলগুলো সঠিক ভাবে করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : সাবেক ইমাম, মসজিদ আল-আনাস রাঃ জিজান, সৌদিআরব।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS