ভিডিও

ইসলামী অর্থনীতিতে বাজার ব্যবস্থাপনা

সাইফুল ইসলাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৯:০৭ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৯:০৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ইসলামী অর্থনীতিতে বাজার ব্যবস্থাপনা অন্যান্য বাজার ব্যবস্থাপনা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই বাজার ব্যবস্থায় ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি বিভিন্ন স্থানে হতে পারে। মূলত পণ্য সামগ্রীর প্রাপ্যতা ও ক্রেতা-সাধারণের সুবিধার্থে যে নির্দিষ্ট স্থানে দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় করা হয় ইসলামী অর্থনীতির ভাষায় তাকে বাজার বলে।

ইসলামী অর্থনীতি বাজারের ব্যাপারে প্রথম যে মূলনীতি পেশ করে তা হলো বাজার হবে স্বাধীন। বাজারে স্বাধীনভাবে বিক্রেতা তার মালামাল নিয়ে এসে বিক্রি করবে আর ক্রেতা তা স্বাধীনভাবে ক্রয় করবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের কৃত্রিম হস্তক্ষেপ করা চলবে না।

গ্রামবাসী বিক্রেতার পক্ষে শহরবাসী বিক্রেতার কাছে পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করা ইসলামী বাজার ব্যবস্থায় অবৈধ। অর্থাৎ গ্রাম থেকে কোনো লোক পণ্যসামগ্রী নিয়ে এলো শহরে চলতি দামে বিক্রয় করার জন্য। কিন্তু শহরের ব্যবসায়ী তাকে বললো, এ পণ্য আমার নিকট রেখে যাও।

পরে আমি বেশি দামে বিক্রি করে তোমার মূল্য পরিশোধ করে দেব। তার মানে পণ্যসামগ্রী আটকে রেখে কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করা। যা ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পূর্ণ নিষেধ। জাহেলী যুগে এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হতো। রাসূলুল্লাহ (সা.) তা নিষেধ করেছেন।

হযরত আনাস (রা.) বলেছেন, “কোনো শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে পণ্যসামগ্রী বিক্রয় না করে এ বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে। সে লোক তার নিজের ভাই, পিতা বা মাতা যাই হোক না কেন।” এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে এ ধরনের বেচাকেনার ফলে মূল বিক্রেতা ন্যায্যমূল্য ও নগদ অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।

পরামর্শ দিতে বাধা নেই: গ্রাম থেকে পণ্যসামগ্রী বিক্রয়ের জন্য আসা কোনো লোককে শহরবাসী কোনো লোক উপকারের উদ্দেশ্যে ঠকবাজী থেকে বাঁচানোর জন্য যদি দ্রব্যটির সঠিক মূল্য জানায় এবং ভালো উপদেশ দেয় তবে তা বৈধ। এমনকি উত্তম কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে।

দালালি জায়েজ: ইসলামী শরীয়াহ মধ্যস্থতা বা দালালির মাধ্যমে করা উপার্জনকে স্বীকৃতি দেয়। তবে তা হতে হবে শরীয়াহ সম্মত উপায়ে। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, “কোনো লোক যদি অন্য একজনকে বলে যে, এ কাপড়টা বিক্রি করে দাও। অতিরিক্ত যা পাওয়া যাবে তা তোমার, তবে এটা তার জন্য জায়েজ।

এ ধরনের দালালি ব্যবসা বা কমিশন এজেন্সি ধরনের কাজ সম্পূর্ণ বৈধ।” রাসূল (সা.) বলেন, “মুসলমান নিজেদের পারস্পরিক শর্ত মেনে চলতে বাধ্য।” (বুখারী) ধোঁকাবাজি নিষিদ্ধ: বাজারের স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে পণ্যকে বেশি দামে বিক্রি করার জন্যে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেয়।

অনেক ফলের দোকানে দেখা যায়, খারাপ ফলগুলো নিচে রেখে ভালো ফলগুলো উপরে সাজিয়ে রাখে, অনেকে তার পণ্য নিয়ে মিথ্যা বলে, আবার অনেকে অপরিপক্ক ফল ওষুধ দিয়ে পাকায়। বস্তুত বাজারে দ্রব্যমূল্যের স্বাভাবিক গতি স্থির রাখার জন্যে ইসলামে ধোঁকাবাজিকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “প্রতারক ও ধোঁকাবাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।” (তিরমিজি)

নির্ভেজাল পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করা: ইসলামী বাজার ব্যবস্থার আরেকটি মূলনীতি হলো বাজারে নির্ভেজাল পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করতে হবে। ত্রুটিযুক্ত মাল বিক্রি করলে তা ক্রেতার নিকট প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় এটা মস্তবড় অন্যায় হিসেবে সাব্যস্ত হবে। নবিজি (সা.) এ সম্পর্কে বলেছেন, “ক্রেতা-বিক্রেতার কথাবার্তা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাবে, ততক্ষণ তাদের চুক্তি ভঙ্গ করার ইখতিয়ার থাকবে।

তারা দু’জনই যদি সততা অবলম্বন করে ও পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহলে তাদের দু’জনেরই এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি তারা দুজনেই মিথ্যার আশ্রয় নেয় ও দোষ গোপন করে তাহলে তাদের এ ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত মূল্যহীন হয়ে যাবে।” নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করা হারাম: বাজারের গতি স্বাভাবিক রাখতে এবং দ্রব্যমূল্য জনগণের পক্ষে রাখতে ইসলাম অতিরিক্ত লাভের আশায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যকে গুদামজাত করে রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে লোক চল্লিশ রাত্রি কাল খাদ্যপণ্য মজুত করে রাখে সে আল্লাহ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল।” (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ)

দ্রব্যমূল্য সাধারণ গতিতে চলা : ইসলামী বাজার ব্যবস্থার অন্যতম নিয়ম হচ্ছে স্বাভাবিক গতিতে বাজারে পণ্যের যোগান হবে আবার স্বাভাবিক গতিতে বিক্রি হবে। চাহিদা কম-বেশি হবার ওপর দ্রব্যমূল্যের গতি ওঠানামা করবে।

জুমুআর সময় কেনাবেচা হারাম : ইসলামী বাজার ব্যবস্থায় সপ্তাহের যে কোনো দিন যে কোনো সময় ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে, তবে জুমুআর খুৎবা শুরুর প্রথমে প্রদত্ত আযানের পর থেকে সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত বাজার কার্যক্রম বন্ধ রাখা অবশ্য কর্তব্য। খোলা রাখা হারাম।

মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, “হে মুমিনগণ! জুমুআর দিনে যখন তোমাদের সালাতের জন্যে ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাও এবং কেনাবেচা পরিত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যদি তোমরা তা উপলব্ধি করো।” (সূরা জুমুআহ : ০৯) এভাবে ইসলামী অর্থনীতি জনহিতকর ও ভারসাম্যপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্যে পেশ করেছে যা আমাদের সুন্দর জীবন গড়তে সহায়তা করে।

লেখক: আইনবিদ ও শিক্ষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, 
যশোর ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ (জেইএসসি)
যশোর সেনানিবাস, যশোর। 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS