ভিডিও রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

লাইলাতুল কদর একটি মহিমান্বিত রাত

ছবি: দৈনিক করতোয়া

লাইলাতুন অর্থ রাত, আর কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ হলো, সম্মানিত রাত বা মহিমান্বিত রাত। এ রাত সারা বছরের সমস্ত রাত অপেক্ষা সর্বাধিক মর্যাদাশীল, বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ও মহিমান্বিত বলে এ রাতের নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল কদর।

অথবা এ রাতের নাম লাইলাতুল কদর রাখার কারণ হলো-যে লোক মূলত মর্যাদাশীল নয় সেও যদি এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী, কান্নাকাটি, তাওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে কাটায় তাহলে সে মর্যাদাশীল হতে পারে।

লাইলাতুল কদরের চারটি বৈশিষ্ট্য রয়েছেঃ (১) এ রাতে মহাগ্রন্থ আল-কুরআর নাযিল করা হয়েছে। (২)এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (৩)এ রাতে হযরত জিবরাঈল (আঃ) ফেরেশতাদের এক দলসহ জমিনে অবতরণ করেন। (৪)এ রাতের আরেকটি ফজিলত আর বৈশিষ্ট্য হলোঃ এ রাতে ‘সালামই’ ‘সালাম’ অর্থাৎ মঙ্গলই মঙ্গল। এতে অনিষ্টের কোন নাম-নিশানা নেই।

সুবহে সাদেক পর্যন্ত এ অবস্থা বহাল থাকে। এর দ্বারা বুঝা গেল যে,লাইলাতুল কদরের ফযীলত এবং বরকত সুবহে সাদেক পর্যন্ত বাকী থাকে। বর্তমানে অনেক মসজিদে এ রকম দেখা যায় যে,ইমাম সাহেবগণ ফজরের নামাযান্তে মুসল্লীদের নিয়ে লম্বা লম্বা মুনাজাত করেন, এটা ঠিক নয়।

কারণ এ মুনাজাত কিসের? যদি লাইলাতুল কদরের জন্য হয়ে থাকে,তা হলে তা তো চলে গেছে সুবহে সাদেক হওয়ার সাথে সাথেই। ফজরের আযান হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে লাইলাতুল কদর শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং, দু’আ, মুনাজাত, ইবাদত-বন্দেগী যা করার তা ফজরের আগেই শেষ করতে হবে। ফজরের নামাযের পর লম্বা দু’আর কোন ফজিলত নেই; বরং সারারাত যারা ইবাদতে কাটিয়েছেন, এ দীর্ঘ মুনাজাত দিয়ে তাদের উপর জুলুম করা হয়। এ রাতটি শান্তিই শান্তি।

সূরা কদরে আল্লাহ তাআলা এ চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনে আবী হাতেম (রাঃ), থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একবার বনী ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন যে,সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল ছিল এবং কখনো অস্ত্র সংবরণ করেনি। সাহাবায়ে কেরাম একথা শুনে কিছুটা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন।

এর কারণ, তাঁরা চিন্তা করলেন আমরা শেষ যামানার নবীর উম্মত। আমাদের গড় আয়ু ষাট-পয়ষট্টি বছর। আর আগের উম্মতেরা একাধারে জিহাদের মত গুরুত্বপূর্ণ আলমই করেছে এক হাজার মাস। আমরা বেশি হায়াত লাভ করলে বেশি বেশি ইবাদত করতে পারতাম। আল্লাহ এই উম্মতের উপর কত মেহেরবান! সাথে সাথে হযরত জিবরাঈল(আঃ)-কে সূরা কদর দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।

হযরত জিবরাঈল(আঃ) হাজির হয়ে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)- এর নিকট পায়গাম পৌঁছিয়ে দিলেন। ‘‘রাসূল কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, লাইলাতুল কদর উপস্থিত হলে হযরত জিবরাঈল (আঃ) একদল ফেরেশতাসহ পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং এ রাতে যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কিংবা বসে আল্লাহ’র যিকরে মশগুল থাকে তাদের জন্য দু’আ করতে থাকেন।’’(মিশকাত) অন্য হাদীছে আরও বিস্তারিত এসেছে যে, এ রাতে হযরত জিবরাঈল আমীন (আঃ)ফেরেশতাদের এক বিরাট জামা’আত নিয়ে জমিনে অবতরণ করেন।

আরও পড়ুন

তাদের সঙ্গে সবুজ রঙের একটা ঝান্ডা থাকে যা কা’বা শরীফের উপর উড্ডীন করে দিয়ে ফেরেশতাগণ পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েন এবং আল্লাহ’র বান্দা-বান্দীরা যে যেখানে যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে বসে আল্লাহ’র ইবাদতে মশগুল থাকে, দু’আ করে,তাদেরকে তাঁরা সালাম করে,তাঁদের সাথে মুসাফাহা করে এবং তাঁদের দু’্আয় আমীন, আমীন বলতে থাকে। হযরত আয়শা(রাঃ) হতে বর্ণিত।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (বুখারী) সুতরাং ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এই পাঁচ রাতের যেকোনো রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে। কাজেই উক্ত পাঁচ রাতেই লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে, যদিও ২৭শের রাত প্রসিদ্ধ। লাইলাতুল কদর অনির্দিষ্ট হলেও আমাদের জন্য অনেকটাই নির্দিষ্ট।

কেননা, লাইলাতুল কদর সাধারণত রমজান মাসেই হয়ে থাকে। তা হলে বাকি এগারো মাস থেকে নির্দিষ্ট হয়ে গেল একমাস। এক মাসের মধ্যে আবার শেষ দশকেই হওয়া নির্দিষ্ট। তা হলে আরো সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। এরপর এ দশ দিনের মধ্যে আবার বেজোড় রাত্রে হওয়া নির্দিষ্ট। তা হলে আমরা লাইলাতুল কদরকে অনেকটা নির্দিষ্টই বলতে পারি। একটু সদিচ্ছা থাকলেই আমরা সবাই লাইলাতুল কদর পাবো। ইনশাআল্লাহ! হযরত আয়শা (রাঃ) একবার বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা যদি লাইলাতুল কদর পাই তাহলে কী করবো?

উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী। অর্থঃ হে আল্লাহ তুমি পরম ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ কর, কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। এই দোয়া বেশি বেশি করবে (ফাযায়েলে রমযান)। নবীজি (সাঃ) বলেন,যে ব্যক্তি এই পূণ্যময়ী রাত্রিতে বঞ্চিত রইল সে সমস্ত মঙ্গল হইতেই বঞ্চিত রইল।

আর যে অতি হতভাগা সেই শুধু এই কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকে। (ইবনে মাজাহ) রমজানের শেষ দশক এলে লাইলাতুল কদরের তালাশে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লুঙ্গি মজবুত করে বেঁধে ইবাদত-বন্দেগী করে রাত জাগতেন এবং পরিবারের লোকদেরও জাগাতেন।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে, আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে পূণ্যের আশায় ইবাদত করে,তার পূর্বের কৃত সমস্ত পাপ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী, মুসলিম)

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে র‌্যাবের অভিযানে ৮৯০ পিস ট্যাপেন্টাডলসহ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হিসেবে যোগ দিলেন আব্দুস ছালাম খান

পাবনার সাঁথিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গৃহবধূ নিহত

নওগাঁর পোরশায় মাদকসহ যুবলীগের সাবেক নেতা আটক

সালাম মুর্শেদীর জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে প্রেরণ

ইরানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বাস খাদে পড়ে ১০ সেনার মৃত্যু