পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর
মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যত নিয়ামত, রহমত ও বরকত রয়েছে- এসবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। সহস্র মাসের ইবাদত-বন্দেগিতে যে পুণ্য অর্জিত হয়, এর চেয়েও বেশি পুণ্য অর্জিত হয় এই বরকতময় রাতের ইবাদত বন্দেগিতে।
হাজার মাসের চেয়ে সেরা কদরের মহিমান্বিত পবিত্র রাত আজ। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, এই পুণ্যস্নাত রাতেই নাজিল হয়েছিল দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ মহা পবিত্র আল-কোরআন। আরবি লাইলাতুল শব্দের অর্থ রাত। কদর শব্দটি আরবিতে বহুমাত্রিক অর্থে ব্যবহৃত।
সম্মানিত, মর্যাদাবান, ভাগ্য নির্ধারক ইত্যাদি অভিধা ধারণ করে এ শব্দটি। বলা যায়, শবে কদর এসব অভিধার প্রতিনিধিত্ব করছে আপন মহিমায়। পবিত্র লাইলাতুল কদর মহান স্রষ্টা আল্লাহর কাছে কতটা মর্যাদাবান তা প্রমাণিত হয় পবিত্র আল কোরআনে কদর নামে একটি সুরা নাজিল হওয়ার ঘটনায়। হাদিসেও এই পবিত্র রাতের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে একাধিক ক্ষেত্রে।
স্বয়ং আল্লাহ পাক আল কোরআনে এ রাতের মর্যাদা ও তাৎপর্য নিয়ে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এই কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা স্বীয় পালন কর্তার নির্দেশে অবতীর্ণ হন।
পরম শান্তি বিরাজ করতে থাকে সূর্যোদয় পর্যন্ত (সুরা কদর)। আনাস (রা) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, লাইলাতুল কদরের এই রাত কেবল আমার উম্মতরাই পেয়েছে। অর্থাৎ মানুষের প্রতি আল্লাহ পাকের যত নিয়ামত ও রহমত রয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হলো এমন একটি বরকতময় রজনিকে তার বান্দাদের জন্য নসিব করা।
আজ ২৬ রমজানের দিন শেষে পবিত্র কদরের রাত লাইলাতুল কদর। রমজান মাসের ২৭ তারিখে, অনেকের মতে রমজানের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় তারিখে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল শুরু হয়েছিল।
আল কোরআন এমন একটি মহাগ্রন্থ যার মধ্যে পূর্ববর্তী সব আসমানি কিতাবের বস্তু এবং ভূ মন্ডল ও নভোমন্ডলের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌল নির্দেশনা একত্রিত করা হয়েছে। বস্তুত আকাশ ও মাটিতে এমন কোনো গোপন রহস্য নেই যার উল্লেখ আল কোরআনে না আছে। পবিত্র এ গ্রন্থটিকে আল্লাহ মানুষের জন্য জীবন বিধান হিসেবে পাঠিয়েছেন।
আরও পড়ুনমক্কার নিকটবর্তী হেরা পর্বতের গুহায় শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা) মক্কায় ছিলেন ১৩ বছর। মদিনায় তার ১০ বছর কেটেছিল। আল কোরআন নাজিল শুরু হয়েছিল বলেই লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম- বাস্তবে যার কোনো তুলনা নেই।
(সুরা কদর-৩) আল্লাহ আরও বলেছেন, এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালন কর্তার নির্দেশক্রমে। (সুরা কদর -৪) এই রাতে আল্লাহ গুনাহগার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখান এবং তাদের মাফ করে দেন। ভালো কাজ না করার কারণে যারা দরিদ্র ও হীন অবস্থায় থাকে তারাও এ রাতের মাহাত্ম্যে এবং তওবা-এস্তেগফার ও ইবাদতের তাগিদ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সা)।
তিনি নিজেও কদরের সারারাত আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। শুধু এই একটি রাত নয়, রাসুলুল্লাহ (সা) রমজানের শেষ ১০ দিনই ইতিকাফ করতেন, যার অর্থ পৃথিবীর সবকিছু ছেড়ে কেবলই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের প্রশংসায় মগ্ন থাকা এবং আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমতের জন্য মোনাজাত করা। গুনাহর জন্য মাফ চাওয়া।
আমাদের দেশে শুধু নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশের মুসলমানের কাছে ২৬ রমজান দিবাগত রাত কদর হিসেবে পালিত হয়। ইবাদত বন্দেগিতে এ রাত কাটান ধর্মপ্রাণ মুসলমান। হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই মহিমান্বিত রাতে মানবজাতির জীবন বিধান আল-কোরআন নাজিল হওয়ায় মুসলমানদের কাছে এটি অসামান্য গুরুত্বের অধিকারী।
কোরআনের শিক্ষা মানবজাতিকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করতে পারে। এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। যুদ্ধ-বিগ্রহ, অশান্তি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য এ রাতে আমরা মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করব।
দেশবাসীর সুখ, শান্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করব। হানাহানি ও অশান্তিতে ভরা বিশ্বে শান্তির জন্য মহান আল্লাহর কৃপার কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন