শাওয়াল মাসে করণীয়-বর্জনীয়
হিজরি সনের ১০ম মাস শাওয়াল মাস। এ মাস মাহে রমজানের পরের মাস। রমজান মাসের সুহবত পাওয়ার কারণে এ মাসের নাম দেওয়া শাওয়ালুল মুকাররম। এ মাসে আমলের সাথে কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো- বিশেষ কয়েকটি আমলের দ্বারা এ মাসকে সুসজ্জিত করা হয়েছে।
(১) ঈদ পালন করা- যা ইতিমধ্যে মুসলমানরা পালন করেছে
(২) শাওয়াল মাসের রোজা- যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোযা পালনের পর শাওয়াল মাসে রোযা রাখবে সে যেন সারা বছরে রোজা রাখল। নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি রমজানের রোযা রাখার পর-পরই শাওয়াল মাসে ৬টি রোযা রাখে, সে যেন পূর্ণ এক বছর রোযা রাখার সমান সাওয়াব লাভ করে। ে[মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ]
এই সাওয়াব এই জন্য যে, উম্মুতে মুহাম্মাদী যে কেউ একটি ভাল কাজ করলে আল্লাহর অনুগ্রহে সে তার দশ গুণ সাওয়াব পাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-কেউ কোন ভাল কাজ করলে সে তার দশ গুণ প্রতিদান পাবেন। [সুরা আল আন’য়াম]। আল্লামা ইবনে রজব (রহঃ) বলেন- শাওয়াল মাসে রোযা রাখার তাৎপর্য অনেক।
রমযানের পর শাওয়াল মাসে রোযা রাখা রমযানের রোযা কবুল হওয়ার আলামত স্বরূপ। কেননা আল্লাহতা’আলা কোন বান্দার আমল কবুল করলে, তাকে পরেও অনুরূপ আমল করার তাওফিক দিয়ে থাকেন।
নেক আমলের প্রতিদান বিভিন্ন রূপ, তার মধ্যে একটি হল পুনরায় নেক আমল করা সৌভাগ্য অর্জন করা। তাই নামাজ, রোযা ও অন্যান্য ইবাদত বাকী ১১ মাসেও চালু রাখা চাই। কেননা যিনি রমযানের রব বাকী ১১ মাসের রব তিনিই।
তিনি আরো বলেন-তবে ইবাদতের মোকাবেলায় গুনাহের কাজ করলে নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। অতএব, কোন ব্যক্তি রমযানের পর পরই হারাম ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, তার সিয়াম স্বীয় মুখের উপর নিক্ষেপ করা হয় এবং রহমতের দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যায়। গুনাহের পর ভাল কাজ করা কতই না উৎকৃষ্ট আমল, কিন্তু তার চেয়ে আরো উৎকৃষ্ট আমল হলো নেক কাজের পর আরেকটি নেক কাজে মশগুল হওয়া।
অতএব, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর যাতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত হকের উপর অটল থাকার তাওফিক দান করেন। সাথে সাথে অন্তর বিপথে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ চাও কেননা আনুগত্যের সম্মানের পর নাফরমানীর বেইজ্জতি কতোই না নিকৃষ্ট। (৩) শাওয়াল মাসে বিবাহ করা- বিবাহ একটি গুরুত্ব পূর্ণ ইবাদত, এই সম্পর্কে নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন-বান্দা যখন বিবাহ করল, তখন তার দ্বীনদারী অর্ধেক পূর্ণ হয়ে গেল। অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করতে থাকে। [মিশকাত শরিফ]।
মানুষের অধিকাংশ গুনাহ দুটি কারণে সংঘটিত হয়। একটি হয় তার লজ্জাস্থানের চাহিদা পূরণের কারণে, আর অন্যটি হয় পেটের চাহিদা পূরণের কারণে। বিবাহের কারণে মানুষ প্রথমটি থেকে হেফাযতের রাস্তা পেয়ে যায়। সুতরাং তাকে কেবল রিযিকের ব্যাপারে চিন্তান্বিত থাকতে হয়। যাতে করে সে হারাম থেকে বেঁচে থাকতে পারে। একজন লোক খুব বড় আবেদ, তাহাজ্জুদ-চাশত-আওয়াবিন ইত্যাদি নফল নামাজ খুব পড়ে কিন্তু সংসারের সাথে তার কোন সংশ্রব নেই।
আরেকজন ফরয-ওয়াজিব-সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় করে এবং বিবি-বাচ্চার হক আদায়ে তৎপর থাকে ফলে তার বেশী বেশী নফল পড়ার কোন সময় হয় না। এতদসত্ত্বেও শরীয়াত কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিকেই ইবাদত গুজার হিসাবে মর্যাদা প্রদান করেছে।
আরও পড়ুনঅর্থাৎ যে ব্যক্তি নবীজী (সা.) এর সুন্নত মোতাবেক বিবাহ-শাদী করে পরিবারের দায়-দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হালাল রিযিকের ফিকির করে, সে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল যে ২৪ ঘণ্টা মসজিদে পড়ে থাকে বা বনে-জঙ্গলে সন্ন্যাসীর মতো জীবন যাপন করে আর সব রকমের সাংসারিক ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে তাসবীহ-তাহলীলে মশগুল থাকে।
বিবাহের অন্যতম আরো একটি ফায়দা হচ্ছে এই যে, এর দ্বারা নবীজী (সাঃ) এর নির্দেশ পালন করা হয়। কেননা নবীজী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আন্নিকাহু সুন্নাতী’ বিবাহ করা আমার সুন্নাত।
(৪) শাওয়াল মাসে হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। হজের জন্য যারা নিয়ত করেছে, তাদের কাজ হলো তারা যেন হজের যাবতীয় মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা করে।
(৫) শাওয়াল মাসে বড় আলেম হওয়ার প্রস্তুতি-যারা বড় হাফেজ-আলেম হতে চায়, বড় মুফতী, শাইখুল হাদীস, মুহাদ্দিস হতে চায়, বড় আল্লাহওয়ালা শায়েখ হতে চায়, কোরআন-হাদীসে পারদর্শি চায় তাদের সকলের ই’লমী সবকের শুরু হয় এই শাউয়াল মাসে।
সারা পৃথিবীর সমস্ত ক্বওমী মাদ্রাসাগুলোতে এই সবক শুরু হয়। কোরআনুল কারীম নাযিল হয়েছে রমযান মাসে আর তার পরের মাসেই অর্থাৎ এই শাওয়াল মাসে সবক শুরু হয়।
শাওয়াল মাসের শিক্ষা : সুহবাত শাওয়াল মাসের শিক্ষা হলো সুহবাত, রমযানের সুহবাতের কারণে শা’বান মাস এবং এই শাওয়াল মাস এত দামী হয়েছে। সুহবাতের কারণে এই মাসকে শাওয়ালুল মুকাররম বলা হয়। ঠিক তেমনি নেক লোকের সুহবতের কারণেই মানুষও দামী হয়।
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত তাকুল্লহা ওয়াকুনূ মা’য়াস সদিকীন’- ‘হে ঈমানদারগণ আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদী লোকের সংসর্গে থাক।’ [সুরা তাওবা]
লেখক : ইমাম ও খতীব, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ বৃন্দাবনপাড়া, বগুড়া।
মুহতামিম, দাঃ ইঃ আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) নুরানী মাদ্রাসা দঃ বৃন্দাবনপাড়া, বগুড়া
মন্তব্য করুন