হাফিজা বিনা: রমজানে ইফতারের তালিকায় প্রধান অনুষঙ্গ হলো খেজুর।
খেজুর না থাকলে ইফতার পরিপূর্ণ হতে চায়না। আর তাই রমজান মাসে এর কদরও বেশি। গত দুই বছর খেজুরের দাম কম থাকায় ভোক্তারা খেজুর খেয়ে খুব তৃপ্ত হয়েছেন । কিন্তু এবছর রমজান মাস আসার আগে থেকেই সারা দেশের মত বগুড়ায় খেজুরের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আমদানী করা বিভিন্ন ধরনের খেজুরের দাম। এক মাসের ব্যবধানে মান ভেদে প্রতি কেজি খেজুরের দাম ইতোমধ্যে অনেক বেড়েছে। আমদানিকারকরা বলছেন সময়মত এলসি করতে না পারা, ডলার সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে খেজুরের দাম বৃদ্ধির জন্য খেজুর আমদানি হয়েছে কম। তবে আশার কথাও বলেছেন অনেক ব্যবসায়ী। তারা বলেছেন, আমদানি করা খেজুর এখনও রাস্তায় আছে। সেগুলো পৌছুলে তখন আবারও দাম কমতে পারে।
এই ব্যবসার সাথে সংশ্লিস্টরা জানান, পবিত্র রমজান মাসেই খেজুরের মুল চাহিদা থাকে। আর এসব খেজুর আমদানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। এর বাইরেও অরো কয়েকটি দেশ থেকে খেজুর আমদানি হয়ে থাকলেও তার পরিমান তুলনামূলক অনেক কম। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে খেজুরের সবচেয়ে বড় বাজার বগুড়ায়। এখান থেকে পাশর্^বর্তী জেলাগুলোর বেশিরভাগ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা খেজুর নিয়ে থাকেন।
বিভিন্ন মান ও দামের খেজুর থাকলেও ইরাক থেকে আসা জাহিদী খেজুর (স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট ইরাকী বস্তা খেজুর হিসাবে পরিচিত) ও দুবাই থেকে প্যাকেট খেজুরের (১০ কেজির কার্টন) চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দাবাস, লুলু. রিজিস ও নাগাল। এছাড়া ৫ থেকে ৯ কেজি’র প্যাকেটে আসা বিভিন্ন খেজুর রয়েছে। এগুলো হলো মদিনা খেজুর, মরিয়ম খেজুর, তিউনিশিয়া খেজুরসহ বিভিন্ন নামের খেজুর।
ব্যবসাীয়রা জানান, কার্টন খেজুরের (প্রতি কার্টনে ১০কেজি) দাম ও মান মাঝারী হওয়ায় এ খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এরপরে চাহিদা রয়েছে ইরাকী বস্তা খেজুরের। গত বছর বস্তা খেজুর প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এবার তা ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে মোকাম থেকে বিক্রি হচ্ছে। খচরা ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১৪০ টাকা প্রতি কেজি। অন্যান্য দেশের খেজুরের চেয়ে সৌদি খেজুররে দাম বেশি।
গতবছর পাইকারি থেকে ৫ কেজি আজুয়া খেজুরের দাম ছিল ১৫শ’ টাকা সেই খেজুর এবার বিক্রি হচ্ছে ৩৫’ থেকে ৪ হাজার টাকা। সাফাভী ছিল ৫ কেজির প্যাকেট ১৫শ’, বিক্রি হচ্ছে ২৫শ’ থেকে ৩৫শ’ টাকা। মেডজুল ৫ কেজির প্যাকেটের দাম ছিল ২২শ’ টাকা, এবার বিক্রি হচ্ছে ৩২শ’ থেকে ৩৫শ টাকা। মাসরু দাম ছিল ১৩শ’ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫শ’ । মাবলুস ছিল ২২ শ’ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২৭শ’থেকে ৩ হাজার টাকা।
ইরানী মরিয়ম পাঁচ কেজির প্যাকেট গতবছর দাম ছিল ২৭শ’, এবার বিক্রি ৩৮শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর দুবাই থেকে আমদানী করা দাবাস ১০ কেজির প্যাকেট গতবছর বিক্রি হয়েছে ১৯ শ’ থেকে ২ হাজার, এবার বিক্রি হচ্ছে ২৪শ’ থেকে ২৫ শ’ টাকা। লুলু বিক্রি হয়েছে ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা, এবার বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫শ’ টাকায়। নাগাল’র দাম ছিল ১৩শ’, এবার বিক্রি হচ্ছে ২২ শ’ থেকে ২২ টাকায়। এরকম বিভিন্ন নামের বিভিন্ন দামের খেজুর বাজারে আছে।
এই খেজুরগুলো পাইকারি মোকাম কিনে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ভোক্তাদের কাছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মোকাম থেকেই তারা বেশি দামে খেজুর কিনছেন এবার। সেই খেচুর তারা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেশি কেজি দরে। তা না হলে তাদের সংসার চলবে কেমন করে।
এদিকে বগুড়ার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মাবরুম বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়, দাবাস বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩শ’, নাগাল ৩শ’ থেকে ৩৫০, জাহিদি ১৪০ থেকে ১৬০, মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে ৯শ’, মেডজুল ৯শ থেকে ১২শ’, সাফাভি/কালমী ৬শ’ থেকে ৭৫০, আজওয়া ৮শ’ থেকে ১হাজার, দাবাস ২৮০থেকে ৩শ’ টাকা, সাদা খুরমা ৩২০, মাশরুখ ৪৫০ বিক্রি হচ্ছে ৬শ টাকায়।
বগুড়া ফল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি নাহিদ ফল ভান্ডারের সভাপতি মোঃ মাহমুদ শরীফ মিঠু জানান, এবার সৌদিতেই চাহিদা বেশি। তাই গত দুই বছরের চেয়ে এবার প্রত্যেকটি খেজুরের দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দামের ভারসাম্য থাকলেও খুচরা বাজারে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। রমজানকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খেজুরের সময় খারাপ খেজুর নিয়ে আসে। তাদের সাথে বেচাকেনা করতে প্রতি কার্টনে তিন চারশ’ টাকার কম বেশি হয় । সেসব ব্যবসায়ীর কারনে আমাদের দুর্নাম হয়। তাই জনসাধারণের স্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর ব্যাবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক।
এবিষয়ে বগুড়ার শীর্ষস্থানীয় আমদানীকারক মুনছুর আলম বলেন, তিনি প্রতি বছর খেজুর আমদানি করেন। এবছর যে সময় খেজুর আমদানি করবেন সে সময় এলসি করতে পারেননি। এছাড়াও ডলার সংকটেরে কারণে তার মত অনেক ব্যবসায়ী অর্ধেকেরও কম খেজুর আমদানি করেছেন।
তিনি আরও জানান, খেুজরের মূল্য বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি (বাইরের মোকামে বুকিং মূল্য), আগের বছরের তুলনায় ডলারের দাম বৃদ্ধিকে দায়ি করেন। দাম ও চাহিদার ব্যাপারে তিনি বলেন, কোভিডের কারণে সৌদিতে হজ্ব ও ওমরাহ করতে না পারায় অনেক খেজুর অবিক্রিত ছিল।
সেগুলো কমমূল্যে এনে কম দামেই বিক্রি করা হয়েছে। এবছর সে চিত্র পাল্টে গেছে। সৌদিতেই খেজুরের চাহিদা বেড়েছে। তাই দামও বেশি। এবছর বগুড়ার বেশিভাগ মোকামে নতুন খেজুর বিক্রি হচ্ছে। তবে বগুড়ার অনেক আমদানিকারক গত বছরের খেজুর বিক্রি করছেন তার দাম কিছুটা কম নিচ্ছেন সেইসব ব্যবসায়ীরা বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।