জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে লক্ষ্মীপুরে জেলেদের মধ্যে ২৫ কেজি করে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিংয়ের (ভিজিএফ) চাল বিতরণ করা হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৩ হাজার ৩০০ জেলে নিবন্ধিত রয়েছেন। এসব জেলে মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২১ দিন মেঘনা নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। মেঘনা নদীর এই এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় এসব এলাকায় সব ধরনের ইলিশ সংরক্ষণ, আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ নিষিদ্ধ রয়েছে।
জেলেদেরকে সচেতন করার জন্য নদী এবং উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং ও প্রচারপত্র বিতরণসহ সব ধরনের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতি জেলেকে ২৫ কেজি হারে খাদ্য সরবরাহ করা হবে। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
জেলার সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাট ঘাট এলাকার জেলে সোহেল হোসেন ও মারফত উল্যাহ বলেন, জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় এবং উৎপাদন বাড়াতে সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটা মেনে জেলেরা নদীতে যাবে না। সরকারের আইন মানা হবে। কিন্তু জেলেদের পুনর্বাসন করার কথা এখনো হয়নি। যে পরিমাণ জেলে রয়েছেন, সে অনুযায়ী যেন প্রত্যেক জেলে সরকারি সহায়তা পান সেটাই আশা করেন তাঁরা। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল লুটপাট না করে সঠিক তালিকা তৈরি করে দ্রুত যেন তা পেতে পারেন সেটা নিশ্চিত করা হোক।
কয়েকজন জেলে বলেন, বর্তমানে যেসব ইলিশ পাওয়া যায়। সেগুলো আকারে অনেক ছোট। পাশাপাশি ডিমওয়ালা ইলিশ কম পাওয়া যায়। যদি এই অভিযান আরও ১০ দিন পরে দেওয়া হতো। তাহলে মা ইলিশ রক্ষায় ও জাটকা সংরক্ষণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতো।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ, উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময়ে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এরপরও যারা আইন অমান্য করে নদীতে যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বছরের অভিযান সফল হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন কয়েক গুন বেড়েছে। এবারও অভিযান সফল হলে অধিক পরিমাণ ইলিশ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, ইতিমধ্যে বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল জেলেদের মধ্যে বিতরণ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি হারে চাল দেওয়া হবে। কেউ বাদ যাবে না। নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেরা নদীতে যাবে না বলে আশা করি। তিনি আরও বলেন, যারা আইন অমান্য করবে তাঁদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করা হবে। এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।