ভিডিও

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪, ০৭:৩০ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪, ০১:৫৪ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।  

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- জয়পুরহাটের পাঁচবিবি রাথাবাড়ীর সবুজ আহমেদের ছেলে আন নাফিউল ওরফে নাফিজ ইকবাল ও মহিপুরের মো. আসিফ তালুকদার।

ভুয়া প্রশ্নপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টা চালানোর অভিযোগও উঠেছে গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে।  

এ বিষয়ে ডিবি জানায়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টেলিগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা-জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আন নাফিউল ওরফে নাফিজ ইকবাল নামে প্রতারকচক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপি গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।  

একইভাবে প্রতারণামূলকভাবে ফেক আইডি খুলে ভুয়া প্রশ্নপত্র বিক্রির নামে অর্থ আত্মসাৎকারী মো. আসিফ তালুকদার নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। এ সময় উদ্ধার করা হয় প্রতারণায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার।

গ্রেপ্তার আসিফ একই সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ পরিচয় দিয়ে সাইবার সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মো. সাদাত রহমানের এর নামে ফেক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বিক্রি করেছেন বলে অভিযুক্ত।  

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।  

তিনি বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে বিষয়টি দ্রুত বিবেচনায় নিয়ে জড়িত প্রতারককে আইনের আওতায় আনতে অভিযান পরিচালনা করে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন দবিলা সংসারদিঘী গ্রাম হতে আন নাফিউল নাফিজ ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিবিপ্রধান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহের কথা বলে বিভিন্ন গ্রুপে প্রচার এবং বিভিন্ন গ্রুপের পোস্টে কমেন্ট করে ভর্তিচ্ছু সাধারণ পরীক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করেন প্রতারকরা। লোভ পড়ে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা অপরাধীদের দেওয়া টেলিগ্রাম নম্বরে এবং ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। তখন প্রতারকরা তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে আগে ২০ হাজার টাকা পাঠানোর পর প্রশ্ন দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। টাকা নেওয়ার পর তারা প্রশ্ন ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রতারণা করেন।

গ্রেপ্তার নাফিজ সম্পর্কে তিনি বলেন, নাফিউল নাফিজ মহিপুর হাজী মহসিন কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। প্রশ্নপত্র বিক্রির নামে প্রতারণামূলকভাবে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

হারুন বলেন, ওই ফেক আইডির ব্যবহারকারী অপরাধী নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবেও পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে করা অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সাদাত রহমানের মামলার প্রেক্ষিতে প্রতারণায় জড়িত আসিফ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার আসিফ তালুকদার সম্পর্কে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, আসিফ তালুকদার ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ পেলেও প্রতারণায় পিছিয়ে নেই। ফেক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণা ও প্রশ্ন বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তোলা সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতার ছবি সংগ্রহ করে ফেক ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। তিনি নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাইবার সিকিউরিটি ইনচার্জ পরিচয় দিতেন। ফেসবুক আইডিতে এসএসসি পরীক্ষার (বিগত সালের) প্রশ্ন পোস্ট করে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর তার পোস্ট দেখে যারা যোগাযোগ করতেন তারাই প্রতারিত হতেন।

হারুন পরামর্শ দিয়ে বলেন, ফাঁসকৃত প্রশ্ন ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকুন এবং এ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেন থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকুন। অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে যে কোনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মনোভাব থেকে সকলকে বের হয়ে আসতে হবে। অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এই ধরনের অবৈধ চক্রের সন্ধান পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবগত করা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।

এ ব্যাপারে সাইবার টিনস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাদাত বলেন, কাজের সুবাদে প্রধানমন্ত্রী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবি আমার ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের দেখিয়ে বলা হয়েছে, আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাইবার সিকিউরিটি অফিসার এবং প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলে বিভ্রান্ত করে বিকাশ নাম্বার ও নগদ নাম্বারে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে এব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করি।

তিনি বলেন, অবাক হলাম যে, আমি নিজে সাইবার সচেতনতায় পুলিশ প্রশাসন, মন্ত্রণালয়, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছি। সেখানে আমি নিজেই ভুক্তভোগী। আমার নামেই প্রতারণা করা হচ্ছে। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের সচেতন হতে হবে। হুটহাট বিশ্বাস করা যাবে না। লোভে পড়ে কখনো অনলাইনে কাউকে টাকা দেয়া যাবে না। লেনদেনে সতর্ক থাকতে হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS