উপজেলা নির্বাচন
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদেরও প্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীয় কোন্দল নিরসন এবং নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কেউ যাতে নির্বাচনী পরিবেশ ‘নষ্ট না করে’ সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে ‘কঠোর’ নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
নাছিম বলেন, ‘আজকে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভাই, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাংগঠনিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের বলে দেয় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ না নেওয়ার জন্য।
কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে নাছিম বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষ চায় একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। আওয়ামী লীগ সরকার সেই সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজন প্রার্থী হয়েছেন।
যার ফলে ওই মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবের কারণে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে খবর এসেছে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।
নির্দিষ্ট করে কাউকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে কি না―সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কয়েকজনকে সাধারণ সম্পাদকের সামনে বসেই ফোন করে ‘না’ করা হয়েছে।
এবার চার ধাপে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫টিতে ভোট হবে, পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ১৫০ উপজেলায় ভোট সামনে রেখে প্রায় দুই হাজার প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, বুধবার বাছাইও শেষ হয়েছে। ৮ মে এসব উপজেলায় ভোট হবে।
দ্বিতীয় ধাপে ১৬১ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত, তৃতীয় ধাপের ১১২ উপজেলায় মনোয়ন জমা চলবে ২ মে পর্যন্ত।
এর মধ্যে নাটোরের সিংড়া উপজেলায় এক প্রার্থীকে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রতদ্বন্দ্বী আরেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক। আরো কয়েকটি জায়গায় স্থানীয় প্রার্থীকে জেতাতে ক্ষমতাসীনদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এসেছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনও পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
আইনে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন করতে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় জেষ্ঠ্য এক নেতা বলেন, দলের কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতাদের অভিমত ছিল, দলীয় প্রতীক বরাদ্দের কারণে দলের তৃণমূলে গ্রুপিং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন দলের হাইকমান্ড। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, দলের প্রভাবশালী নেতারা, বিশেষ করে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীরা তাদের স্ব স্ব নির্বাচনী এলাকায় আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী করছেন, অথবা ‘মাই ম্যান’ সৃষ্টির জন্য পক্ষের লোককে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এ কারণে দলের তৃণমূলের কমান্ড ভেঙে পড়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু এমপি-মন্ত্রীদের প্রশাসনের ওপর খবরদারি করার সুযোগ আছে, সে কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, যে এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করছেন, তারা নির্বাচন করতে পারবেন না, এমনকি তাদের পছন্দের লোকের পক্ষেও সমর্থন দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।