ভিডিও

প্রধানমন্ত্রীকে মির্জা ফখরুল

পরাজিত হইনি পরাজিত হবো না

প্রকাশিত: মে ০১, ২০২৪, ০৭:৪০ বিকাল
আপডেট: মে ০১, ২০২৪, ১১:৪৬ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনাদের অপরাধ হচ্ছে— গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে ধ্বংস করেছেন।’

বুধবার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে শ্রমিক দল আয়োজিত র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এসময় তিনি কারাগারে অন্তরীণ বিএনপির নেতাকর্মী, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে স্মরণ করেন।

শ্রমিক দলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তব্য রাখার কথা থাকলেও তিনি আসেননি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ‘অতি ডান, অতি বাম সরকার পতনের জন্য এক হয়েছে কীভাবে, তিনি তা বুঝতে পারেন না’ শীর্ষক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দুঃখ হয়, কষ্ট হয়। যখন দেখি আমরা আওয়ামী লীগের সভানেত্রীকে দেখি, তিনি বলেন, ‘কী এমন হয়েছে। কী ঘটেছে, বুঝতে পারছেন না?’ সমস্যাটা এখানেই। বুঝতে পারছেন না। অথবা বুঝেও না বুঝার ভান করেন। আজকে কেবল অতি বাম, অতি ডান নয়, আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যপন্থি কেবল নয়, সব মানুষ, যেকোনও পন্থারই হোক— মানুষ বুঝতে পারছে তাদের ন্যূনতম অধিকারটুকুও নেই।’

‘‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) আরেকটা কথা বলেছেন। বলেছেন, ‘আমাদের অপরাধ?’ আপনাদের অপরাধ হচ্ছে— গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে ধ্বংস করেছেন। জনগণের ন্যূনতম অধিকার, প্রতি পাঁচ বছর পর তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সেই অধিকারটুকুও আপনারা কেড়ে নিয়েছেন। এখন নির্বাচনকে এমন একটা তামাশায় পরিণত করেছেন, আপনারাই বলেন ডামি প্রার্থী।’’ বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক ত্যাগ আমরা স্বীকার করেছি। অনেক ভাই গুম খুন হয়েছেন। মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। আমাদের নেত্রী এখনও কারাগারে বন্দি। আমাদের তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জোর পাঁয়তারা কারা করছে।’

তিনি দাবি করেন, ‘এদের কৌশল একটু ভিন্ন। আগেরকার দিনের মতো সংসদে বিল পাস করে বাকশাল করতে চায় না, তারা গণতন্ত্রের একটি লেবাস রেখে দিয়ে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে, জনগণকে দমন করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে।’

তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এতে প্রমাণ করে বিএনপি শুধু নয়, এই দেশের সব গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতকামী মানুষ জেগে উঠেছে। আবার জেগে উঠবে সবাই। আমি অনেকবার বলেছি— বিএনপি হচ্ছে সেই ফিনিক্স পাখির মতো, যে ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার জেগে উঠে। বাধা সরিয়ে জেগে উঠে আন্দোলন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের কথা বলে।’

বুধবার (১ মে) দুপুর আড়াইটার আগে থেকে মাইকে স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। পাঁচটি পিকআপ ভ্যানের ওপর স্থাপিত অস্থায়ী মঞ্চে নেতারা চেয়ারে বসেন। সমবেত নেতাকর্মী ও অনুসারীরা মাথায় ক্যাপ, হাতে লাল পতাকাসহ নানা ব্যানার, ফেস্টুন ব্যবহার করেন।

নেতাকর্মীদের প্রতি মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেন, ‘একটি কথা মনে রাখতে হবে সব সময়— আমরা কখনোই অতীতেও পরাজিত হইনি। আমরা পরাজিত হবো না। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবো। অনেকে বলে, এটা বিএনপির সংগ্রাম। এটা বিএনপির সংগ্রাম নয়, এটা এই দেশের মানুষের অস্তিত্বের সংগ্রাম, অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম।’

‘সে অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। আরও ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।’ বলেন ফখরুল।

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষে উল্লেখ করেন, ‘আমাদের চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের জেগে উঠতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, সব দল, মত, সংগঠন, ব্যক্তি সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই গণতন্ত্রের, শ্রমিকের, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনবো।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মানুষের মুক্তি, শ্রমিকের মুক্তি অবৈধ সরকারের অপসারণের ওপর নিহিত রয়েছে। অনেকেই বলতে পারেন, বিএনপি পারেনি। বিএনপি পারবে না। কিন্তু বিএনপির চেষ্টার কমতি করেনি। সরকার অন্যায়ভাবে, নিষ্ঠুরভাবে আন্দোলন দমন করেছে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার দেশের সব শিল্প ধ্বংস করে ফেলেছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সও।

রিজভী তার বক্তব্যে ‘অতিসন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, অতিসন্ত্রাসী যুবলীগ, অতি ব্যবসায়ী, অতি লুটপাটকারী’ উল্লেখ করেন।  বলেন, ‘এরা কি আপনার গদি রক্ষা করবে?’

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে কথা বলেন শ্রমিক নেতা সামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

সমাবেশ শেষে একটি র‌্যালি নাইটিঙ্গেল মোড়, বিজয়নগর মোড় হয়ে নয়া পল্টনে শেষ হয়।

র‌্যালিটি মালিবাগ পর্যন্ত আসার পূর্বনির্ধারিত সূচি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নাইটিঙ্গেল মোড়ে অবস্থান নেওয়ায় সামনে যেতে পারেনি।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS