যশোর প্রতিনিধি: তীব্র গরমে যশোরে মহাসড়কের বিটুমিন গলে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে যশোর-নড়াইল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গলে যাওয়া বিটুমিন পরীক্ষা করেন দুদকের কর্মকর্তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারাও ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দেশজুড়ে চলছে টানা তাপপ্রবাহ। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে গলে নরম হতে শুরু করে যশোর-নড়াইল আ লিক মহাসড়কের বিটুমিন।
ঠিকাদাররা বলেছিলেন, উচ্চ তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহারে ঘাটতির কারণে সড়কের কোনও কোনও অংশ গলে যাচ্ছে। ওসব অংশে যথেষ্ট পরিমাণ উন্নত বিটুমিন ব্যবহার না করায় এমনটি হচ্ছে।
তখন এক ঠিকাদার বলেছিলেন, ‘আগে রাস্তা তৈরি হতো কম। আমরা পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন অয়েল কোম্পানি থেকে বিটুমিন সংগ্রহ করতাম। এখন প্রচুর পরিমাণ সড়কের কাজ হচ্ছে। সে কারণে তারা সে পরিমাণ সরবরাহ করতে পারছে না। একসময় ইরান থেকে বিটুমিন আমদানি করা হতো। এখন অবশ্য বন্ধ। ফলে দেশীয় সাধারণ গ্রেডের অর্থাৎ তরল বিটুমিন ব্যবহার করতে হয়। সঙ্গত কারণেই উচ্চ তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহার করা হয় না। লোকাল মার্কেট থেকে “নিয়ন্ত্রিত কিছু ব্যবসায়ীর” কাছ থেকে কিনতে হয়। তারা যে ধরনের বিটুমিন সরবরাহ করে, সেগুলো দিয়ে আসলে মানসম্মত সড়ক তৈরি সম্ভব নয়। এই কারণে বিটুমিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় কিংবা বেশি গরম পড়লে গলে যাচ্ছে।’
এদিকে পরিবহনশ্রমিক ও সচেতন মহলের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এতে যানবাহন চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন চালকরা। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এসব বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক। দুপুরে দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে যশোর-নড়াইল সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গলা বিটুমিন পরীক্ষার পাশাপাশি সড়কের তাপমাত্রা দেখেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে সড়ক দেখে এ ব্যাপারে যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের দুদকের উপপরিচালক আল আমিন হোসেন বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সড়কের কাজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সড়কে গলে যাওয়া বিটুমিন দেখতে পেয়েছি। এই কাজ নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে করা বলে মনে হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে আমরা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবো। এরপর প্রধান কার্যালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এ সময় দুদকের সহকারী পরিচালক চিরঞ্জন নিয়োগী, সহকারী পরিদর্শক সাফিউল্লাহসহ সড়ক বিভাগের দুজন সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, চার মাস আগে যশোর-নড়াইল মহাসড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
তবে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি দাবি করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘যশোর-নড়াইল মহাসড়কের যেসব স্থানে বিটুমিন বেশি পড়েছে; গরমে সেখানকান বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এজন্য গলে যাওয়া স্থানগুলোতে বালু ও গুঁড়া পাথর দেওয়া হচ্ছে। যাতে গলে যাওয়া পিচ আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। দুদক তদন্ত করছে। অনিয়ম হলে তাদের তদন্তে জানা যাবে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।