করতোয়া ডেস্ক : সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, আগুন শতভাগ নিভে গেছে, এ রকম নয়। কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কারণ, বনের আগুন স্বাভাবিক আগুন নয়। আপাতদৃষ্টে মনে হয় নিভে গেছে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সুন্দরবনে লাগা আগুন নেভানোর সর্বশেষ পরিস্থিতি জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে।
শতভাগ নিভে গেছে, এ রকম বলেননি। কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কারণ, বনের আগুন স্বাভাবিক আগুন নয়। আপাতদৃষ্টে মনে হয়, নিভে গেছে। কিন্তু কোনো কিছু দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতে পারে। পরে হয়তো আবার জ্বলে উঠতে পারে। তাই বনের আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে নিভে যাওয়ার ঘোষণা করা যায় না। এ জন্য এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কয়েক দিন পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার সুন্দরবন-পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন নজরে আসে সবার। এর পর আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন বন বিভাগের কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এলেও এদিন তারা কাজ শুরু করতে পারেননি।
সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : মন্ত্রিসভার বৈঠকে সুন্দরবনে লাগা আগুনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ সময় সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীকে সুন্দরবনের আগুনের সর্বশেষ অবস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে তাকে অবহিত করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন যে, আগুন নেভাতে ৫৫ অগ্নিনির্বাপনকর্মী কাজ করছেন। দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীও সেখানে সক্রিয় আছেন। তারা অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। যে কারণে তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে। তবে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়নি। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া বনের গহীনে লাগা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে তৃতীয় দিনের মতো গতকাল সোমবার কাজ করা হয়েছে। এদিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সুন্দরবনের ৫ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।
ধোঁয়া দেখলেই পানি স্প্রে : সুন্দরবনে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণের কাজ করছে বনবিভাগ, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ সহকারী বনসংরক্ষক রানা দেব জানান, গত রাত ১টা পর্যন্ত বনবিভাগ এককভাবে আগুন নেভাতে পাম্প মেশিন দিয়ে পানি স্প্রে করেছে। এর ফলে এখন আর কোথাও তেমন একটা আগুন দেখা যাচ্ছে না। তবে যেখানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে সেখানেই পানি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রিত আগুন পুরোপুরি নেভাতে সোমবার সকাল ৭টা থেকে বনবিভাগের সহায়তায় কাজ শুরু করেছেন নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগামী আরও দুইদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে পানি ছিটানো হবে। তবে আপাতত আর ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ আগুন যাতে আর ছড়াতে না পারে সেজন্য রোববার ফায়ার লাইন কেটে সেখানে পানি দিয়ে রাখা হয়েছে। আর আগুনের অস্তিত্ব তেমন একটা নেই, শুধু কিছু কিছু জায়গায় ধোঁয়া রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।