বিএনপিকে ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যতই মুরুব্বি ধরুক, এদের আমরা ছাড়বো না। এদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জোটের শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কল্যাণ হবে না। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে আরও সুসংগঠিত হতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি; ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে রোজই আন্দোলন ও সরকার উৎখাতসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে আছে ওটা আমি কেয়ার করি না।
‘তারপরও এরা যেন দেশে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ এগুলো করতে না পারে। এগুলো যারা করবে, তাদের কোনো ছাড় নাই। যতই মুরুব্বি ধরুক, আর যা-ই ধরুক, এদের আমরা ছাড়বো না। মানুষের ক্ষতি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে’- এ প্রসঙ্গে যোগ করেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গাদের অনেকের ঘরে সন্তানের জন্ম হচ্ছে। তাদের জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মিয়ানমারেও পরিস্থিতি ভালো নয়। তাদের তো আর ঠেলে দিতে পারি না। আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়াও করতে যাইনি। কখন যে তাদের ফেরাতে পারবো, জানি না। আমরাও তো (মুক্তিযুদ্ধকালীন) রিফিউজি ছিলাম, ফলে রোহিঙ্গাদের কষ্টটা বুঝি। তাদের ভাসানচরে নিচ্ছি। কিছু গেছে, আরও যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছি। গাজায় গণহত্যা চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। যেখানেই যাই, এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মারা যাওয়ার ঘটনায় আমরা শোক দিয়েছি। শোক দিবসও পালন করেছি। যেখানেই মানুষ বিপদে পড়েছে, আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এ নীতিতে আমরা কাজ করছি।
মূল্যস্ফীতিকে এসময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইনফ্লুয়েশনের এখন অনেক দেশেরই সমস্যা। এটি কমাতে পারলে ভালো হতো। রিজার্ভ আমাদের মতো অনেক দেশেরই কমছে। আমাদের আপদকালীন সময়ের জন্য খাদ্য মজুত থাকলে রিজার্ভ কমলেও কোনো সমস্যা হবে না। তারপরও আমি এটি নিয়ে সচেতন করায়, এখন দেখি সবাই এ নিয়ে কথা বলছে। এটি ভালো। অন্তত বললে সবাই সচেতন থাকবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি বলেছি, সবাইকে উৎপাদনে মনোযোগী হতে। নিজেদের চাহিদা পূরণে অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে বলেছি। গোপালগঞ্জে আমরা একটি সমিতির মাধ্যমে চাষাবাদ করেছি। সেখানে সবাই এটি করছে। এভাবে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনলে আমাদের খাবারের অভাব হবে না। বরং রপ্তানি করতে পারবো। অবশ্য, এখনো সবজি-ফুল রপ্তানি হচ্ছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও, টেলিভিশন করে দেওয়ার পরও বলছে, কথা বলতে পারি না। ফেসবুকেও সমালোচনা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আমরাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশও এ সমস্যা মোকাবিলার ব্যাপারে সচেতন।
তিনি বলেন, স্কুলে ছেলেদের সংখ্যা কমছে। মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এবার (এসএসসির ফলাফলে) মেয়েরা বেশি পাস করছে, ছেলেরা কম। এর কারণ খুঁজে বের করতে বলেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ফান্ড থেকে আমরা সুবিধা দিচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, দেশের ২২ জেলা ও ৩৩৪ উপজেলা এখন ভূমিহীন গৃহহীন মুক্ত। বাকিগুলোও হবে। প্রত্যেক নাগরিক দুই শতক জমিসহ ঘর পাবে। কোনো মানুষ ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না। কেউ অভুক্ত থাকবে না। পাশাপাশি নিরক্ষরও থাকবে না। সবাইকে পড়াশোনার আওতায় আনবো। বেকারও থাকবে না। কর্মসংস্থানের নানা সুযোগ সৃষ্টি করছি আমরা।
তিনি বলেন, বিএনপির অহমিকা ছিল, তারাই বড় দল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিট পেয়েছে মাত্র ৩০টি, সেটিই তাদের ক্ষোভ। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচনে আসেনি। এরপর থেকে তো বাংলাদেশে নির্বাচনই হতে দেবে না, এমন অবস্থা। হ্যাঁ, কোনো এক সাদা চামড়া থেকে প্রস্তাব এসেছে, বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি করবে। সে সুযোগ দিলে তারা নির্বাচন করতে দেবে। আমি রাজি হইনি। আমি এ প্রস্তাব পাত্তা দিইনি, সোজা কথা। দেশের মানুষই আমার শক্তি, আমি তাদের ওপরই নির্ভর করি।
২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে না পারার কারণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, গ্যাস বিক্রি নিয়ে অনেকদিন দেনদরবার হয়। আমার একটিই কথা ছিল, দেশের চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত থাকলে বিক্রি করবো। এত বড় দেশ, এমন কথা তো সহ্য করবে না, এটিই স্বাভাবিক। বৈঠক হলো- খালেদা জিয়া রাজি হলেন গ্যাস বিক্রির জন্য। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমি বলেছি, গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে, এমন দৈন্যতা আমাদের নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশের স্বার্থ বিক্রি করে ক্ষমতায় যাবো না। এরপরই কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
বৈঠকে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতারাও অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চক্রান্ত এখনো আছে। পূর্ব তিমুরের মতো বাংলাদেশের একটা অংশ নিয়ে, তারপরে চিটাগাং-মিয়ানমার মিলিয়ে একটা খ্রিস্টান স্টেট বানাবে। বঙ্গোপসাগরে একটা ঘাঁটি করবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনই হতে দেবে না। তবে দেবে, আর আমারও ক্ষমতায় আসতে অসুবিধা হবে না; যদি আমি বাংলাদেশে কারও এয়ারবেইস করতে দেই, ঘাঁটি করতে দেই, তাহলে আমার কোনো অসুবিধা নাই। কোনো এক সাদা চামড়ারই প্রস্তাব।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট জবাব দিয়েছি, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারও হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমার ক্ষমতার দরকার নেই। জনগণ যদি চায় ক্ষমতায় আসবো, নইলে আসবো না। এ কথাগুলো সবার জানা উচিত। আমার যেটা যুদ্ধ সেটা ঘরে-বাইরে সব জায়গায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগর এখানে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আর এ জায়গায় কোনো বিতর্ক নেই, এখানে কারও কোনো দ্বন্দ্বও নেই। এ জায়গার ওপর অনেকের নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না, এটাই আমার একটা অপরাধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে এয়ারবেজ করে কার ওপর হামলা করবে। যদিও একটা দেশকে দেখানো হয়, কিন্তু সেটা তো না। আমিতো জানি আরও কোথায় যাবে। যে কারণে আমাদের সবসময় কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এবং হবেও, এটা আমি জানি। কিন্তু আমি তাতে পাত্তা দেই না। দেশের মানুষ আমার শক্তি, দেশের মানুষ ঠিক থাকলে সব ঠিক। দেশটা যে উন্নত হচ্ছে এটাই অনেকের পছন্দ না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।