এমপি আনার খুন
কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনারের মরদেহ টুকরো টুকরো করে পাবলিক টয়লেট থেকে হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন কলকাতায় তদন্তে থাকা বাংলাদেশের ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ।
সোমবার (২৭ মে) সারাদিন তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
হারুন অর রশিদ বলেন, শনিবার (২৫ মে) বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই আমরা নিউটাউন থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাই। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করার পর আমরা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সিআইডি প্রধানের সঙ্গে কথা বলি।
‘কলকাতা পুলিশ যে ঘাতককে গ্রেফতার করেছে, তাকে নিয়ে আমরা আজও পুরো ঘটনাস্থল ঘুরে দেখলাম ও প্রতিটি জায়গায় কোথায় কী করেছে, সবটাই আমরা পাই টু পাই তার কাছ থেকে শুনেছি।’
সোমবার সকালের দিকে টিআই প্যারেড করানোর জন্য নিউ টাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনে আনা হয় গ্রেফতার আসামি জিহাদকে। ১৩ মে এই সঞ্জীবা গার্ডেনের 'বিইউ-৫৬' ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক ধারণা।
ফ্ল্যাটের যে ঘরটি এমপিকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে যান বাংলাদেশের ডিবি প্রধান। সঙ্গে ছিলেন ভারতের সিআইডি কর্মকর্তারা ও নিউ টাউন থানার পুলিশ। জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঘটনার পুনঃনির্মাণ করেন তারা।
হারুন অর রশিদ জানান, জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে যে এমপি আনারের লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে দেওয়া হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি বাগজোলা খাল ও তার আশেপাশের এলাকায়। সোমবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব থাকলেও জিহাদকে নিয়ে সেই বাগজোলা খাল পরিদর্শনে যান তিনি।
এছাড়া আনারের মরদেহ টুকরো টুকরো করে যে পাবলিক টয়লেটে হস্তান্তর করা হয় সে জায়গাটিও পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশের ডিবি প্রধান।
সঞ্জীবা গার্ডেনের নিস্তব্ধতা দেখে হারুন অর রশিদ বলেন, আমাদের প্রাণবন্ত সংসদ সদস্য আনারকে হত্যা করে তার লাশটাকে টুকরো টুকরো করে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনামাফিক গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অপরাধীরা ঘটনাকে ভিন্ন ধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। যে আলিশান বাড়িতে এমপিকে হত্যা করা হয়েছে; আমাদের মনে হয়, এখনো সেখানে ঘাতকদের অট্টহাসি শুনতে পাচ্ছি, এমপির কান্না শুনতে পাচ্ছি।
একজন সংসদ সদস্য এখানে এলেন, আর তার নিজ দেশেরই কিছু মদতদাতা পাশবিক কায়দায় অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করে ফেললো। এমনকি, মরদেহটি যাতে খুঁজে না পাওয়া যায়, তার জন্য টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হত্যায় কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল, তা নিয়ে হারুন অর রশিদ জানান, এসব বিষয় নিয়ে কাজ চলছে, আমরা পরে জানিয়ে দেবো। তদন্তের স্বার্থে এখন আর কিছু বলতে পারছি না।
পশ্চিমবঙ্গে সিআইডি কর্মকর্তাদের তদন্তের অগ্রগতির প্রশংসা করে বাংলাদেশের ডিবি প্রধান বলেন, পশ্চিমবঙ্গের তদন্ত কর্মকর্তারা যেভাবে কাজ করছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট। আমি নিশ্চিত যে পুরোপুরি না হলেও, শিগগির তারা লাশের অংশ খুঁজে পাবেন। তারা যে আপ্রাণ চেষ্টা করছে, সেটা আমরা নিজের চোখেই দেখলাম। এখানকার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের পাওয়া সব তথ্য আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসা করেও আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি।
তিনি আর বলেন, তদন্তের অগ্রগতি মূলত একটি লম্বা প্রক্রিয়ার বিষয়। যেহেতু দুটি দেশে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ও বাংলাদেশেও যেহেতু এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, তাই আমরা দুই দেশেই তদন্ত চালাচ্ছি। ঘটনাটি অনেক দিনের সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে। তবে নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি যে ঠিক কী কারনে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সবটাই জানানো হবে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।
নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কলকাতায় একজন ও বাংলাদেশে তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন। তারা হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তবে এখনো হত্যাকাণ্ড ও মরদেহ পাওয়ার জট খোলেনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।