পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তানদের তলব করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে বেনজীর আহমেদকে আগামী ৬ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা ও ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে শেয়ার বাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট বা বিও হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত অবরুদ্ধ বা ফ্রিজের আদেশ দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদের নামের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট বা বিও হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাশাপাশি বেনজীর আহমেদের স্ত্রী, তার বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের নামে সকল বিও হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশ দেয় সংস্থাটি।
নির্দেশনায় বলা হয়, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বেনজীর আহমেদের বিও হিসাব রয়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিও হিসাব রয়েছে।
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন আদালত। ২৩ ও ২৬ মে আদালত থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি যাতে হস্তান্তর না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর আদালতের জব্দের আদেশ পাঠানো হয়েছে। ব্যাংক হিসাবের অর্থ যাতে হস্তান্তর বা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের আদেশ পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককেও।
গত ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর ৩নং বিধির আওতায় কার্যক্রম শুরু করা হয়।
তিনি বলেন, দুদক আইন, ২০০৪ এর ১৫নং ধারার বিধানমতে বর্ণিত অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ঈদ পরবর্তী কমিশনের প্রথম সভায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য অনুমোদিত হয়। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি মোতাবেক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুসন্ধান সমাপ্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।