ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বরিশাল বিভাগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ভোলা জেলায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ওই জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ জনে। এছাড়া ঝালকাঠি জেলায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এ বিভাগে মৃত্যু বেড়ে এখন ১৯ জন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলায় ঘরচাপা পরে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ফারুক হাজারী (৫০), লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চর উমেদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে ঘর চাপায় মনেজা খাতুন (৫৫), দৌলতখানে ঘরচাপা পড়ে মাইশা নামের ৪ বছরের এক শিশু, চরপাতা ইউনিয়নে আমজাদ হোসেন (৫৫) ঘরচাপায় মৃত্যু হয়। বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নে গাছের ডাল পড়ে জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) মারা যান। এছাড়া বোরহান উদ্দিন ইউনিয়নে ঝড়ের পানিতে আসা সাপের কামড়ে পক্ষিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আবু সায়ীদ মাঝির (৬০) মৃত্যু হয়।
ঝালকিঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের বলতলা গ্রামে ঘরের উপরে গাছ চাপা পড়ে জাকির হোসেন (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, জেলায় তিনজন গাছচাপায় আর দুইজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। তারা হলেন- ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নে জাকির হোসেন (৫৫), তেলিখালী ইউনিয়নে মাজেদা বেগম, ইন্দুরকানী উপজেলায় চানবরু বেগম (৭৫)। এছাড়া ভান্ডারিয়া উপজেলায় পৌরসভা এলাকায় দিহান (৩) ও সদর উপজেলার ঝাটকাঠি একলায় হাসান নামে এক যুবক পানিতে ডুবে মারা গেছে।পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কাউয়ারচরে প্লাবনে ডুবে শরীফ (২৪) নামে একজন, দুমকি উপজেলার নলদোনিয়া গ্রামে গাছচাপায় জয়নাল আবেদিন (৭০) ও বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের আব্দুল করিম (৬৫) ঘরচাপায় মারা যান। বিষয়টি জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম নিশ্চিত করেছেন।
বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় ঘরের ওপর পড়া গাছ সরাতে গিয়ে চাপা পড়ে আব্দুর রহমান বয়াতির (৫৬) মৃত্যু হয়েছে। তিনি আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের লেমুয়া গ্রামের মৃত খুতি বয়াতির ছেলে। তবে বরগুনা জেলা প্রশাসনের প্রস্তুত করা ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে কারো মৃতের তথ্য পাওয়া যায়নি।এছাড়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৫নং ওয়ার্ডের রুপাতলীতে দেয়াল ধসে টিনশেড হোটেলের ওপর পড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে লোকমান হোসেন নামে একজন হোটেল মালিক ও মোকছেদুর রহমান নামে ওই হোটেলের কর্মচারী। এদের দুজনের বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। তাছাড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলার চর দাড়িয়ালের বাসিন্দা জালাল সিকদারের (৫৫) ওপর গাছের ডাল পড়ে মৃত্যু হয়।
মৃতের পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে বলে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী আসার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।প্রধানমন্ত্রী আগমনের বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, আগামী ৩০ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী সফর করবেন। আমরা এখনও অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে আমরা সকল প্রকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এসময় তিনি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে অংশগ্রহণ করবেন বলেও আমারা জেনেছি।পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন, ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঝড়ে এই এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই এলাকায় এসেছিলেন দুর্গতদের খোঁজখবর নিতে। আমরা জেনেছি প্রধানমন্ত্রীও কলাপাড়ায় আসবেন দুর্গতদের খোঁজ নিতে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনের সংবাদে আমরা আওয়ামী নেতা কর্মীরাসহ জেলার সকল মানুষ খুবই আনন্দিত। আমরা তাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।