“নিউজে যে মাংস উদ্ধারের বিষয়টি দেখানো হচ্ছে, ডিএনএ টেস্ট না হলে তো আমরা নিশ্চিত হতে পারব না,” বলেন ডরিন। ভারতের ভিসা হাতে পেলেই কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলে জানিয়েছেন ‘খুন হওয়া’ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
আজ বুধবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নিজেদের বাসার সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুপুর পর্যন্ত তিনি ভারতীয় ভিসা সেন্টার থেকে পাসপোর্ট ফেরত পাননি।
“আমার ভিসাটা দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। ওরা বলেছিল একটা টেক্সট আসবে, ওটা রিসিভ করলে পাসপোর্টটা আজকেই দিয়ে দেবে হয়ত। ভিসাটা পেলেই ভারতে যাব।”
কলকাতার যে অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনার ‘খুন হয়েছেন’ বলা হচ্ছে, তার সেপটিক ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।
সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে ডরিন বলেন, “এখনো ডিএনএ টেস্টের বিষয়ে তারা আমাকে কিছু জানায়নি। তবে নিউজে যে মাংস উদ্ধারের বিষয়টি দেখানো হচ্ছে, ডিএনএ টেস্ট না হলে তো আমরা নিশ্চিত হতে পারব না। ডিএনএ টেস্ট না করলে তো মেনে নিতে পারব না।”
ডরিন জানান, তার এক চাচা এবং এমপি আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফও কলকাতায় যাচ্ছেন তার সঙ্গে।
“রউফ ভাইয়েরও পাসপোর্ট জমা দেওয়া আছে। তিনিও যাবেন। আমার চাচা যাবেন। তার অলরেডি ভিসা আছে।” গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ডরিন বলেন, “আমি জিজ্ঞেস করছিলাম লাস্ট আপডেট কী, তারা আমাকে বলেছে ‘আপনি ভারতে আসেন। সাথে আপনার চাচাকে আনতে পারেন বা আপনার রক্ত সম্পর্কীয় কাউকে আনতে পারেন’।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেও নেওয়া হয়।
ওই তিনজন হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমান (২২)।
এছাড়া গতকাল মঙ্গলবার যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে কয়েকটি খাল, জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও আনারের লাশের হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।
ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকের জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন, যেখানে আনারকে হত্যার কথা বলা হচ্ছে।
সঞ্জিভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পরে তা ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এই ডিএনএ নমুনা মেলানোর জন্য রক্তসম্পর্কীয় স্বজন প্রয়োজন হয়।
মানববন্ধন : এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যা রহস্য উন্মোচন, হত্যার ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আজ বুধবার মানববন্ধন করেছেন।
‘কালীগঞ্জের বারোবাজার রাখালগাছি ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়সবাসী’ ব্যানারে বারোবাজার বাসস্ট্যান্ডে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কালীগঘ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডু, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও কালীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শিবলী নোমানি, শ্রমিক লীগ সভাপতি গোলাম রসুল, বারোবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, রাখালগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু সেখানে বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।