ভিডিও

বেনজীর আহমেদের কালো টাকা কী সাদা হবে? উত্তর দিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: জুন ০৯, ২০২৪, ০৬:৩৮ বিকাল
আপডেট: জুন ১০, ২০২৪, ১২:০৩ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

বাজেটে ‘কালো টাকা সাদা’ করার সুযোগ রাখা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে অর্থমন্ত্রীর বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এলো বেনজীর আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদের’ প্রসঙ্গ।

একজন সাংবাদিক জানতে চাইলেন, সাবেক পুলিশ মহা পরিদর্শক বেনজীর ‘অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ’ কর দিয়ে বৈধ করার আইনি সুযোগ পাবেন কি না।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বললেন, সে সুযোগ বেনজীর পাবেন না, কারণ এরইমধ্যে তিনি এবং তার সম্পদ ‘আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে’ পড়ে গেছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার কাজেট প্রস্তাব করেন। সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনা প্রশ্নে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়।

অতীতের রেওয়াজ মেনে বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রীয়। বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের পাশাপাশি এনবিআর চেয়ারম্যানও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রীর আহ্বানে তারাও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের মত ব্যক্তিরা এখন ১৫ শতাংশ কর দিলে কালো টাক সাদা হয়ে যাবে কি না, সেই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।


জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়টি এখন ফৌজদারি (আইনি) প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিলে তার সম্পদ বৈধ হবে কি না, সেটা এখন আইনি প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।”

গত মার্চের শেষে সাবেক আইজিপির বিপুল ‘অবৈধ’ সম্পদের খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। এরপর বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। পরে দুদক অনুসন্ধানে নামে। দুদকের আবেদনে বেনজীরের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দেয় আদালত।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই মেয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবও করেছে দুদক। তবে সাবেক আইজিপি ইতোমধ্যে সস্ত্রীক দেশ ছেড়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।

বেনজীরকে নিয়ে প্রশ্নে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এ ক্ষেত্রে কর দিলে সম্পদ কীভাবে বৈধ হব, সেটা তো আইনি প্রশ্ন। তবে এত ঢালাওভাবে আমরা এটাকে দেখতে চাই না। বিভিন্ন কারণে মানুষের অপ্রদর্শিত কিছু সম্পদ থাকতে পারে। এ ধরনের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধভাবে দেখানোর সুযোগ দিতে আমরা এমন প্রস্তাব দিয়েছি।”

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাভাবিক কর হার বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

স্বাভাবিক নিয়মে নিয়মিত কর দেওয়ার পরে অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করারও সুযোগ থাকে। এবার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে আয়কর আইনে বিষয়টি যুক্ত করতে সংশোধনী আনার কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী।

সেখানে তিনি বলেছেন, অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন, ভবিষ্যতে এই অর্থ নিয়ে কোনো সংস্থা, দপ্তর বা মন্ত্রণালয় প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার রাজস্ব সংগ্রহ অধ্যায়ের ২৫৫ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “রিটার্ন দাখিলে করদাতার অজ্ঞতাসহ অনিবার্য কিছু কারণে অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। এ অবস্থায় করদাতাদের আয়কর রিটার্নে এই ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ প্রদান এবং অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমি আয়কর আইনে কর প্রণোদনা সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ সংযোজনের প্রস্তাব করছি।

“প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী, দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহারে এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫% কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে আরেক সাংবাদিক জানতে চান, বেনজীর আহমেদসহ সরকার ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের যাদের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, তারা গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এমন পর্যায়ে গেলেন।

এ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, “বেনজীর আহমেদের বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে যে অধিকার তার (বেনজীর) পাওয়ার কথা, তাকে সেটা দেওয়া হবে।”


দুর্নীতি দমন কমিশন যে বিষয়টি অনুসন্ধান করছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনুসন্ধান শেষে প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অনুসন্ধান প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

“এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির হতে বেনজীর আহমেদ সময় চেয়েছেন। তাকে সময় দেওয়া হয়েছে। এটা বলা হয়নি যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না; আবার এটাও আগাম বলা হয়নি যে তাকে আমরা জেলে নেব, ফাঁসি দেব। নাগরিক অধিকার তিনি (বেনজীর) পাবেন।”

অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের আগে শুক্রবার সকালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাজেট প্রতিক্রিয়ার আরেক সংবাদ সম্মেলনেও বেনজীর প্রসঙ্গ আসে।

দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ কর দিলে বৈধ হয়ে যাবে, এভাবে দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যাবেন কি না– সাংবাদিকরা সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জবাবে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এবার প্রথমবারের মত আয়কর আইনে একটি বিষয় সংযুক্ত করা হচ্ছে যে, অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করলে পরবর্তীতে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না “

এটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বেলাতেও প্রযোজ্য হবে কি না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে সুশাসনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কর ফাঁকিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা কর দিলেই তা বৈধ হবে, তার ‍দুর্নীতি অনিয়মকে ধরা হবে না, এমন সুযোগ রাখা কতোটুকু গ্রহণযোগ্য হতে পারে?”

“এখানে একটি রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে। কালো টাকার মালিকদের মাথায় হাত বুলানো হচ্ছে।”



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS