কোরবানির পশুর হাট
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা এখনো জমে ওঠেনি। কিছুসংখ্যক ক্রেতা হাটে ঘুরে ঘুরে গরু, ছাগল, মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানির পশু দেখছেন এবং দাম যাচাই করে করছেন। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশু নিয়ে হাটে আসা ব্যাপারীরা অপেক্ষা করছেন ক্রেতার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বড় ১১ টি গরু নিয়ে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী বাদল। শাহীওয়াল, হলিস্টিন জাতের গরুগুলোর দাম হাঁকছেন ৩ থেকে ১১ লাখ টাকা। তবে তিনদিনে একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি তিনি। একই অবস্থা কুষ্টিয়া থেকে আসা আবদুল্লার। তিনি এনেছেন ৬ টি গরু। তিনদিনে বিক্রি হয়নি একটিও।
বিক্রেতারা বলছেন, সবশেষে ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের দামের ফারাক থাকছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা ছোট গরুর দাম হাঁকছেন বেশি।
শুক্রবার দুপুরে গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ব্যাপারীরা পশু নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এখনো ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশু আসছে।
মাঝারি আকারের একটি দেশীয় গরু দেখিয়ে এক ব্যাপারী বলেন, এটার দাম চেয়েছি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বলছেন। ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় একজন কিনবেন বললো। পরে বলে দাঁত ওঠেনি। না কিনেই চলে গেলো।
গরু ব্যবসায়ী বাদল বলেন, ঢাকার মানুষ এত তাড়াতাড়ি গরু কেনেন না। তাদের তো গরু রাখার জায়গা নেই। আশা করছি, রাত থেকে বেচাকেনা শুরু হবে।
হাটে এ ব্যবসায়ী বিরাট আকারের ১১টি গরু এনেছেন। আকার ভেদে যেগুলোর দাম তিনি চাইছেন ৩ থেকে ১২ লাখ টাকা। তিনি বলেন, বড় গরুরও ক্রেতা আছে। আশা করছি, গরুগুলোর ভালো দাম পাবো।
ক্রেতার চেয়ে গরু বেশি, হতাশ বিক্রেতারা : সারা দেশ থেকে বিক্রির জন্য গরু নিয়ে যেসব বিক্রেতা হাজারীবাগ হাটে এসেছেন, তারা যারপরনাই হতাশ। বসে বসে অলস সময় পার করছেন তারা। যদিও গরু বিক্রির ব্যাপারে এখনো যথেষ্ট আশাবাদী বিক্রেতারা। সবাই আশা করছেন, দ্রæতই বেচাকেনা জমে উঠবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ক্রেতার সামনে নজর কাড়তে গরুকে ধুয়ে-মুছে গোসল করিয়ে এবং খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করতে দেখা গেছে।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বসেছে এবারের হাট। হাজারীবাগের ট্যানারি মোড় থেকে কিছুটা সামনের দিকে এগোলে রাস্তার দুই পাশে দেখা যাবে অসংখ্য গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। ফুটপাতের ওপর অস্থায়ীভাবে বাসস্থান গড়েছেন গরুর সঙ্গে আসা পাইকার, বিক্রেতা ও রাখালরা। এর বিপরীত পাশে রয়েছে ছাগলের হাট। দুটি বাজারই অনেকাংশেই ফাঁকা, ক্রেতাশূন্য। গরু নিয়ে যারা এসেছেন তারাই ঘোরাফেরা করছেন। অনেক বিক্রেতা ও রাখাল ফুটপাতের ওপর শুয়েবসে অলস সময় পার করছেন।
চট্টগ্রামে এখনও জমেনি পশুর হাট, দাম বেশির অভিযোগ : তেমন জমে উঠেনি চট্টগ্রামের কুরবানির পশুর হাট। শেষ মুহ‚র্তে ভালো বিক্রির আশা বেপারিদের। তবে যারা পশু দেখতে হাটে আসছেন তারা বলছেন, বাড়তি দাম হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা।
চট্টগ্রামের বিবির হাট গরুর বাজার। যেখানে প্রায় চার হাজারের উপরে গরু আনা হয়েছে কুরবানি উপলক্ষে। তবে সেভাবে এখনো হচ্ছে না বেচাবিক্রি। অনেক বেপারিই গরু নিয়ে অলস সময় পার করছেন হাটে। যাও দুএকজন ক্রেতা আসছেন তারাও দামে দরে না হওয়ায় ফেরত যাচ্ছেন। বরাবরের মতো এবারও বাজার দেশীয় গরুর দখলে। পশু খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কোনোভাবেই গরুর দাম কমছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
হাটের একজন গরু বিক্রেতা জানান, তিনি একটি গরু ৮ লাখ টাকা দাম চেয়েছে। কিন্তু ক্রেতা কোনো দাম বলেনি তাকে। আরেক বিক্রেতা জানান, তিনি এই হাটে ১৪টি গরু এনেছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র একটি গরু তিনি বিক্রি করতে পেরেছেন।
একই অবস্থা অন্যান্য পশুর হাটেও। লাখ টাকার নিচে গরু মেলাই যেন দায় হয়ে উঠেছে ক্রেতাদের জন্য। এক-দেড় লাখ থেকে শুরু করে আট-দশ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা। সবচেয়ে বেশি চাহিদা শাহীওয়াল জাতের গরুর। তবে গরু পর্যাপ্ত থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বেশি নিতেই এখনো বাজারে গরু আনছেন না বেপারিরা, অভিযোগ ক্রেতাদের।
হাটে পাহাড়ি গরুর চাহিদা বেশি : পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে জমে উঠেছে কোরবানি পশুর হাট। হাটে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে পাহাড়ি গরু। পাহাড়ি গরু প্রাকৃতিক সব ধরনের লতা-পাতা খেয়ে বড় হয়। ফলে এ গরুর মাংস স্বাদে সেরা বলে জানান ক্রেতারা। শহরের ট্রাক টার্মিনালে বসেছে কোরবানি পশুর হাট। গতকাল শুক্রবার সকালে হাট ঘুরে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বোটে করে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। ঘাটে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা বোটেই অনেকে সেরে নিচ্ছেন বেচাকেনার কাজ। ট্রাক টার্মিনাল প্রাঙ্গণেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গরু। জেলা শহরের বাইরে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী ও চট্টগ্রাম থেকেও এই পশুর হাটে আসছেন ক্রেতারা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ডা. আব্দুর রহমান বলেন, ‘পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে পালন করা হয় গরু। এ গরুগুলো পাহাড়ের বিভিন্ন লতা-পাতা খেয়ে বড় হয়। ফলে এসব গরুর রোগবালাই থাকে না। এসব গরুর মাংস স্বাদেও সেরা হয়।’
হাটে ২২টি গরু নিয়ে এসেছিলেন সুশীল চাকমা। এরমধ্যে ২১টিই বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘বাজারে গরুর চাহিদা অনেক। ক্রেতারা পাহাড়ি গরু বেশি চান।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।