ভিডিও

বাড়ির পথে মানুষের ঢল

ঈদযাত্রায় সড়কে ভোগান্তি, ট্রেন-লঞ্চে স্বস্তি

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৪, ০৬:৫৫ বিকাল
আপডেট: জুন ১৫, ২০২৪, ১২:৫৫ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শুক্রবার ভোর থেকে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। সকাল থেকে প্রতিটি ট্রেনই যথাসময়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছে। যাত্রা বিলম্বের খবর পাওয়া যায়নি। লঞ্চ ঘাটেও একই অবস্থা। উপচেপড়া ভিড় থাকলেও স্বস্তির কথা জানিয়েছেন ট্রেন ও লঞ্চযাত্রীরা।

এদিকে, সকাল থেকেই বাস টার্মিনালগুলোতে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের ঢল নামে। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় শুক্রবার সকাল থেকে সড়ক পথে মানুষের চাপ চোখে পড়ার মতো। কিন্তু মহাসড়কে যানজটের কারণে দূরপাল্লার বাসগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেরি হয়। এতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। অপর দিকে দেশের বিভিন্ন মহসড়কে বেড়েছে যানজট। ফলে ভোগান্তি নিয়েই বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ। অবশ্য শত ভোগান্তির পরও বাড়ি ফিরতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন তারা।

কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, শুক্রবার দুটি ঈদ স্পেশালসহ ৪৩টি আন্তঃনগর ও লোকাল মেইল কমিউটার মিলিয়ে ৬৯টি ট্রেন যাত্রী বোঝাই করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে সারাদিনে অন্তত দেড় লাখ মানুষ রেলপথে ঢাকা ছেড়েছে। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত কোনো সিডিউল বিপর্যয় নেই। আশা করি এমনটা ঘটার সম্ভাবনা নেই।

সড়ক পথে উল্টো চিত্র। ঢাকা-সাভার মহসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলী কোরবানির পশুর হাটের কারণে কল্যাণপুর থেকে আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের। অপর দিকে, টাঙ্গাইলের মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী লেনের ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ভোর থেকে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও ধীরগতি রয়েছে। ফলে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগে ফেলেছে গ্রামে ছোটা মানুষদের। তবে চারলেনের মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন স্বাভাবিক রয়েছে।

জানা যায়, শুক্রবার ভোরে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার পুংলী এলাকায় মালবাহী একটি ট্রাক উল্টে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পরিবহন চলাচল। পুংলী থেকে টাঙ্গাইলের আশিকপুর বাইপাস পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

দুর্ঘটনার কারণে সার্ভিস লেন দিয়ে চলচল করতে থাকে গাড়ি। তবে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মালামালসহ দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি সরিয়ে নেয়া হয়। এতে যান চালচল স্বাভাবিক হলেও রয়েছে ধীরগতি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেড়েছে চাপ, যান চলাচলে ধীরগতি : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় চলছে ধীরগতিতে। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ছে। জুমার নামাজের পর গাড়ির চাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের উভয় লেনে একই দৃশ্য দেখা গেছে।

কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে শুরু করে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত বেশ থেমে থেমে চলছে গাড়িগুলো। বেলা ১১টার দিকে চান্দিনা অংশে বেতন বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। ফলে ১০-১২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ঘণ্টা দুয়েক পর অবরোধ তুলে নিলে যানজট কমতে থাকে। তবে হঠাৎ গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ধীরগতিতে চলতে হয়।

দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুল আলম, ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম এবং ময়নামতি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার বলেন, জুমার নামাজের পর মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। চান্দিনায় শ্রমিকদের অবরোধের ফলে সৃষ্ট জটলা না থাকলেও গাড়ি যাচ্ছে ধীরগতিতে।

শ্রমিক বিক্ষোভে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ধীরগতি : বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় মহাসড়কে আটকা পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চান্দিনার বেলাশহর এলাকায় ‘ডেনিম প্রসেসিং প্লান্ট’ কারখানার শ্রমিকরা এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। কারখানাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কের অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র গাড়ির জট তৈরি হয়।

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, “শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয়মুখী লেনে দীর্ঘ যাজটের সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা সরে যাওয়ার পর গাড়ি চলাচল শুরু করে।

পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা যানবাহনের ঢল, কয়েক কিলোমিটার জুড়ে যানজট : ঘরমুখো যাত্রীর ঢল নেমেছে ঢাকা-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায়। শুক্রবার সকাল থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে যানজট। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় যানবাহনগুলোকে টোল দিতে অপেক্ষা করতে হয় কিছু সময়। সেতু এলাকায় যানবাহন এগুচ্ছে ধীরগতিতে। তবে মহাসড়কে তেমন ভোগান্তি নেই।

সরজমিনে দেখা যায়, মাওয়া টোল প্লাজার মোট সাতটি বুথ দিয়ে পাড়ি দিচ্ছে যানবাহন। তবে প্রতিটি বুথেই যানবাহনের সারি। মোটরসাইকেলের টোল আদায় হচ্ছে একটি বুথ দিয়ে। মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত যানবাহন, গণপরিবহন যে যেভাবে পারছে বাড়ির পথে ছুটছে। টোল প্লাজায় কিছু সময় অপেক্ষা করা ছাড়া খুব একটা ভোগান্তি নেই এ পথে।

কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, পশু কেনাসহ প্রয়োজনীয় কাজে ছুটির প্রথম দিন থেকেই বাড়ির পানে ছুটছেন তারা। তবে টোল প্লাজায় এসে অপেক্ষায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

টিকিটের জন্য লম্বা লাইন, ভোগান্তিতে যাত্রীরা : রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে যাত্রীদের লম্বা লাইন। তবে অধিকাংশ বাসের কাউন্টারে নেই টিকিট। আবার কিছু কিছু পরিবহনের টিকিট থাকলেও সংকট রয়েছে বাসের। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলগামী নিরালা সুপার পরিবহনের টিকেটের জন্য যাত্রীরা ৩-৪ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে। টিকিট থাকলেও পর্যাপ্ত বাস না থাকায় যাত্রীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, বাস ঠিকই রয়েছে কিন্তু ভাড়া বাড়ানোর জন্য কাউন্টার কর্তৃপক্ষ বাসের সংকটের অজুহাত দিচ্ছে।

টাঙ্গাইলগামী যাত্রী হাবিবুর রহমান নিরালা বাসের টিকিটের জন্য তিন ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি জানান, তিন ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু না বাস আসছে, না কাউন্টার থেকে আমাদের টিকেট দেওয়া হচ্ছে। মহাখালী থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ভাড়া ২৫০ টাকা। এখন ভাড়া বৃদ্ধি করার জন্য বাসের সংকটের অজুহাত দেখাচ্ছে বাস কর্তৃপক্ষ।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS