বাড়ি যাব, গাড়ি ছাড়ো...
বাড়ি যাব, গাড়ি ছাড়ো...নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের স্বপ্ন বাড়ি যাচ্ছে। আর এ যাত্রায় রাজধানী ঢাকা ফাঁকা হওয়া শুরু করলেও ফাঁকা ছিল না রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট এবং বাস স্ট্যান্ডগুলো। ভীড়, লম্বা লাইন কিংবা গাড়ি বা বাস না পাওয়ার হতাশা যেন কাবু করতে পারছে না যাত্রীদের। কেননা তাদের চোখে-মুখে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আমেজ।
রোববার বাদেই সোমবার মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল আজহা। আর ঈদের এই আনন্দ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে উপভোগ করতে এরইমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। আর ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় শনিবার (১৫ জুন) রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও বাস স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
কমলাপুল রেলস্টেশনে দেখা যায়, যাত্রীদের উপচেপড়া ভীড়। বিশেষ করে, বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভীড় যেন স্রোতে পরিণত হয়। কেননা এদিনই অনেকের অফিস ও গার্মেন্টস ছুটি হওয়ায় কর্মজীবী বহু মানুষ রেলস্টেশনে ছুটে এসেছেন। আর এতেই তৈরি হয় বাড়তি চাপ। ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ সামলাতে নিরাপত্তাকর্মীদের কিছুটা হিমশিম খেতে দেখা গেলেও, পরবর্তীতে তারা সামলেও নিচ্ছেন।
ঈদ উদযাপনের বাড়তি উন্মাদনা আর পরিবারের কাছে ছুটে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে যেন সব প্রতিকূল পরিবেশ হার মানে। ভিড় ঠেলে টিকিট নিয়ে ট্রেনে প্রবেশের পরই যেন ঘরমুখো মানুষের মুখে স্বস্তির হাসি। এবার অপেক্ষা কখন ট্রেন ছাড়বে, আর কখন বাড়ি যাবে।
রাজশাহীগামী যাত্রী লিটন হোসেনকে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভিড়ের মুখে পড়তে হয়। তবে প্রবেশের পরই যেন সব আক্ষেপ দূর। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১১ মাস পর বাড়ি যাচ্ছি। বাড়ি যাওয়ার এই আনন্দে কিসের ভিড়, কিসের অস্বস্তি। টিকিট নিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করেছি, বসার সিটটাও পেয়েছি। সিট যদি নাও পেতাম, দাঁড়িয়ে যাওয়া লাগলেও যেতাম। কোনও আক্ষেপ নাই, কারণ বাড়ি যাচ্ছি।’
ঘরমুখো মানুষের এই চাপ নৌপথেও লক্ষ করা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি ও লঞ্চে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। সকালে আবহাওয়া ভালো থাকায় স্বস্তি নিয়ে ঘাট পার হয়েছেন যাত্রীরা।
ঘাট কর্তৃপক্ষ জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট দিয়ে কয়েকদিনের জন্য যানবাহন এবং যাত্রী সংখ্যা বেড়ে গেছে। লঞ্চের পাশাপাশি ফেরিতে পার হচ্ছেন যাত্রীরা। কখনও কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে ফেরিগুলো। তবে ঘাট এলাকায় ভোগান্তি কিংবা যানজট নেই।
যাত্রীরা জানান, যানজট না থাকায় তারা স্বস্তি নিয়েই ঘাট পার হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর সংখ্যা ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে। তবে কোনো যানবাহনকে ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ জানান, সকাল থেকে ঘাটে যাত্রীদের বেশ ভিড় দেখা গেলেও ভোগান্তি নেই। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ২৩টি ফেরি, ৩৩টি লঞ্চ ও ৪১টি স্পিডবোট চলাচল করছে।
এদিকে বাসস্ট্যান্ডেও যাত্রীদের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। যাত্রীর তুলনায় বাসের সংকট থাকলেও সড়কপথে তেমন একটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না যাত্রীদের।
সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, কাচঁপুর বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, বাড়ি ফেরার জন্য যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। অনেকে নির্বিঘ্নে নিজ গন্তব্যের পরিবহন পেলেও, অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে অনেকে বাসের অপেক্ষায় আছেন। তবে কিছু কিছু বাস কাউন্টারের চিত্র ভিন্ন, সেখানে যাত্রীর চাপ নেই।
খুলনাগামী খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘অনেকক্ষণ ঘুরে বাসের টিকিট পেয়েছি। তাও আবার বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। বেশি ভাড়া নিয়েছে, তাও বাস সময়মতো ছাড়ছে না। গরমের মধ্যে এসি বাসের টিকিটও পেলাম না দেখে ননএসি বাসের টিকিট কেটেছি। তবে গাড়ি ছাড়লেই বাড়ি যেতে পারবো ভেবে অন্যরকম আনন্দ লাগছে।’
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।