পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমার পানি দুটি পয়েন্টে বিপদৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন পানি বাড়বে এবং স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, রোববার দুপুরে মৌসুমের প্রথমবারের মত সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ছাতক পয়েন্টে ভোর থেকে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ নদী সুনামগঞ্জে ৭.৮২ মিটার এবং ছাতকে ৯.৩০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে ৭.৮০ ও ছাতকে ৮.৬৮ হচ্ছে বিপৎসীমার লেভেল।
প্রকৌশলী বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারী বর্ষণ হতে পারে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে মামুন হাওলাদার বলেন, “সুনামগঞ্জে এ কারণে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা আছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে।”
এদিকে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে।
অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, পাউবোর ফসলরক্ষা বাঁধের কারণে ঢলের পানি নামতে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই নতুন সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তাছাড়া পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা বালু ও পলিতে সীমান্ত নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণেও এই সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের পানি হাওরগুলোতে প্রবেশ করায় মানুষের নৌ যাতায়াত সহজ হয়েছে।
পাউবো সুনামগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘালয়ে শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫১৩ মিলিমিটার এবং শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ছাতক উপজেলার উপরেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকা ভারতের চেরাপুঞ্জি অবস্থিত। চেরাপুঞ্জির ঢলের পানি ছাতক ও সুনামগঞ্জে আসতে মাত্র চার ঘণ্টা লাগে। এ কারণে মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হলে সীমান্ত নদী ও ছোট পাহাড়ি খাল দিয়ে দ্রুত পানি নেমে আসে সুনামগঞ্জের এ দুটি উপজেলায়।
এই পানি বিভিন্ন হাওরে প্রবেশ করে এবং নদ-নদী দিয়ে সুনামগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের হাওর-নদী হয়ে কিশোরগঞ্জের মেঘনায় গিয়ে পতিত হয়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের নামে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করায় এখন ঘন ঘন এই সমস্যা হচ্ছে। কারণ পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে বাঁধা পাচ্ছে। এ ছাড়া সীমান্ত নদীগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। আগের মতো পানি ধারণ করতে পারে না। তাই লোকালয়ে এসে ক্ষতি করছে।
“এ ছাড়া এই এলাকার প্রধান সমস্যা করছে সত্তরের দশকে নির্মিত ‘পাণ্ডারখাল বাঁধ’। এখানে বাঁধের কারণে সীমান্তের পানি নামতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত হাওরে প্রায় ৫ হাজারের বেশি ফসলরক্ষা বাঁধ হয়েছে। এ সময়ে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নেও হাজারো সড়ক হয়েছে। কিন্তু এই তুলনায় সীমান্ত নদী চেলা, খাসিয়ামারা, সোনাই, চলতিসহ সীমান্ত নদীগুলোর এক কিলোমিটারও খনন হয়নি।
গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, শুধু সীমান্ত এলাকায় বাঁধ, রাস্তাঘাট নির্মাণ বা নদী খনন না করাই সমস্যা নয়। ভারতের মেঘালয়ে পাহাড় ধ্বংস করে, বনাঞ্চল ধ্বংস করে কয়লা ও চুনাপাথর তোলা হচ্ছে। এতে বন, জঙ্গল, গাছ উজার হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।