চামড়া ব্যবসায়ীরা ভোল পাল্টেছেন
গত বছরের তুলনায় কাঁচা চামড়ার দর সরকারিভাবে পাঁচ টাকা বাড়ানো হলেও বাজারে ছবি উল্টো। বড় আকারের একটি চামড়া গড়ে বিক্রি হচ্ছে আটশ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় কম।
ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হলেও এখন কথা রাখছেন না আড়ৎ মালিকরা, অভিযোগটা এমনই। আর আড়ৎদাররা বলছেন, চামড়ার বাজার না বুঝেই দাম ঠিক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বছর ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, গত বছর যা ছিলো ৫০-৫৫ টাকা।
ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা এক হাজার ৩৭৫ থেকে দেড় হাজার হাজার ৫০০ টাকা।
গত বছর পুরান ঢাকার পোস্তায় মাঝারি আকারের গরুর একেকটি চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০-৮৫০ টাকায়। ঢাকার বাইরে দাম ছিলো আরও কম।
লাভের আশায় সরকারি দর হিসেব করেই কয়েকজন বন্ধু চামড়া সংগ্রহ করতে যান সাইন্সল্যাব মড়ে। এসেই মাথায় হাত। যত টাকায় একেকটি চামড়া সংগ্রহ করেছেন, বাজারে দর তারচেয়ে অন্তত একশো টাকা কম।
একজন বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করে আড়ৎদাররাতো সেই রেট নেয়ও না।
এবার লবণযুক্ত চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করেছিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই দাম মাথায় রেখে যারাই চামড়া সংগ্রহ করেছে, তারাই পড়েছেন বিপাকে।
একজন বিক্রেতা বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীরা একটা সিন্ডিকেট করেছে। সে রেট সরকার দিয়েছিলো সেটাতো আৎতে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই থেকে তিন লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া ৮০০ টাকা, এটা হয়!
চামড়া সংগ্রহ করতে আসা ট্যানারি ও আড়ত মালিকদের প্রতিনিধিরা দুষছেন সরকারকে। তাদের দাবি, চামড়ার বাজার সম্পর্কে ধারণা না নিয়েই দাম ঠিক করেছে সরকার। যদিও ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়েই দাম ঠিক করেছিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকারতো মনে করেন কেমিক্যাল ইমপোর্ট করছে না। ওগুলো কোম্পানি করে। সরকার বিক্রির রেট জানে না।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারেতো রেট কম। আমাদের বেশিরভাগ ব্যবসা চায়নার সাথে। চায়নার সাথে ব্যবসা করা খুব খারাপ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে থাকা চামড়া শিল্প মালিকদের সংগঠনও এখন ভোল পাল্টেছে।
হাইড অ্যান্ড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, মন্ত্রণালয়ের সব লোকতো কাঁচা চামড়ার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এতিমের হক মনে করে চামড়ার দাম একটু বাড়িয়ে দিয়েছে। অপ্রিয় সত্য কথা, রেটটা ঠিকমতো থাকে না।
সবশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিলো। সেবার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। এর পর থেকে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে চামড়া সড়কে ফেলে ও মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়। এতে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়।
পরের বছর সরকার তৎপরতা বাড়ায়। তবে দাম কমে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম। গত তিন বছর সরকার নির্ধারিত দাম কিছুটা বাড়লেও কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে সেই দরের চেয়ে কমে।
চামড়া বিক্রি নিয়ে এমনিতেই বিপাকে ছোট ব্যবসায়ীরা তখন আমিন বাজারে চামড়া সংগ্রহের জায়গার ইজারা নিয়ে পথে পথে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ইজারাদারের বিরুদ্ধে।
এক বিক্রেতা বলেন, অনেক দিন ধরে চামড়া বিক্রি করছি। কোনোদিন ইজারা দিতে হয়নি। এখানে খাজনা নিতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বলেছে, না দিলে মারবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।