ভূমি সংস্কার বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নানা সংস্থার ৫১৫ কোটি টাকার বেশি ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রয়েছে। রেলওয়ে, পরিবেশ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর বকেয়া টাকার পরিমাণ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩৮টি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া ছিল ৪৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। একই বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নতুন বকেয়া ৮৪ কোটি ৫৩ লাখ। পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে মোট কর বকেয়া ৫৩৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। আর বকেয়া রয়েছে ৫১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে ভূমি উন্নয়ন কর পাওনা রয়েছে ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সংস্থাটির মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলওয়ে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে সচেষ্ট। চলতি অর্থবছরে ভূমি উন্নয়ন খাতে যে বরাদ্দ ছিল, তার বাইরেও অন্যান্য খাতের অব্যবহৃত টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা হচ্ছে। বাকি বকেয়ার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ হবে
এর আগে, চলতি মাসে সংসদে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জাতীয় সংসদে জানান, রেলওয়ের ৬ হাজার ৮৪০ দশমিক ৬১ একর জমি বেদখলে আছে।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, বকেয়ার পরিমাণ বেশি রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বন অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদফতর, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের।
গত ৫ মে বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেয় ভূমি সংস্কার বোর্ড। এতে বলা হয়, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ ও নিজস্ব আয় বৃদ্ধি অপরিহার্য। ভূমি উন্নয়ন কর রাজস্ব আদায়ের অন্যতম উৎস। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ভূমি উন্নয়ন কর আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫৯ কোটি ৩১ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ তার অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বকেয়া পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে ভূমি সংস্কার বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের তুলনায় বকেয়ার পরিমাণ কমে এসেছে। আগে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া ছিল। নানা উদ্যোগের পর বকেয়ার পরিমাণ কমে আসছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে চলতি অর্থবছরের পাওনার পরিমাণ কম। চলতি জুন মাসের মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধও করবে। তবে বছরের পর বছর ধরে পুরোনো ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া রাখা হয়।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই কর সরকারেরই এক প্রতিষ্ঠানের কাছে অন্য প্রতিষ্ঠানের পাওনা। সময়ে সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়ে এসব বকেয়া কর আদায়ের ব্যবস্থা করতে পারে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।