রাজধানীর গুলাশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির সাত সদস্যের দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। সাজা বাড়ানোর বিষয়ে উচ্চ আদালতে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন।
রোববার (৩০ জুন) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি। এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, অপরাধের ধরন হিসেবে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড যথার্থ ছিল, আদালত কি কারণে সহানুভূতি দেখিয়েছেন পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির সব মামলাকে অগ্রাধিকার দিতে নির্দেশনা আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছুই করা হবে। দুর্নীতি রোধে সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবী প্রতিটি ব্যক্তির সম্পদের হিসাব দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত।
এর আগে গত বছর রাজধানীর গুলাশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির সাত সদস্যের দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া সাত জঙ্গি হলেন, রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন ও শরিফুল ইসলাম খালেদ। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি।
এ ঘটনায় করা মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান একজনকে খালাস দিয়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা মামলায় সাতজনের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) এবং আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়। পরে এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ৩০ অক্টোবর দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলাটির শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর গত ৩ মে থেকে শুনানি শুরু হয়। পরে গত ১১ অক্টোবর শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩০ অক্টোবর দিন রাখা হয়েছিল।
দেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এ হামলায় ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি, এক ভারতীয়, এক বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দুজন বাংলাদেশিসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।
হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি। তারা হলেন, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।