জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শিল্প পুলিশের (চট্টগ্রাম) অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবুল হাশেম ও তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই দম্পতি নগরীর খুলশী থানার পলিটেকনিকেল কলেজ রোডের রূপসী হাউজিংয়ে বসবাস করেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-১ কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-২ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ। এর মধ্যে তাহেরিনা বেগমের আয়ের উৎস হিসেবে বুটিকের ব্যবসা দেখানো হলেও দুদককে সেই ব্যবসার কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেননি তারা।
দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত-২ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ জানান, দুদক আইনের উল্লিখিত ধারায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
দুদকে করা এজাহার অনুযায়ী, মো. আবুল হাশেমের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রাখার তথ্য উঠে এসেছে। এ কারণে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
অপর মামলার এজাহারে তাহেরিনা বেগমের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করা এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগ দখলে রাখার তথ্য পাওয়া গেছে। এ কারণে দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় তিনি অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
একইভাবে মো. আবুল হাশেম পুলিশে চাকরিরত অবস্থায় অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে পারস্পরিক যোগসাজশে স্ত্রী তাহেরিনা বেগমের নামে সম্পদ অর্জন ও সম্পদ স্ত্রীর ভোগ দখলে রাখতে সহযোগিতা করার দায়ে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় হাশেম ও তাহেরিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার তদন্তকালে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ আরও বলেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম ২০১৫ সালে নগরের খুলশীর রূপসী হাউসিং সোসাইটি এলাকায় চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। ওই সময় তার স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। স্ত্রীর আয় দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করিয়েছেন দেখানোর জন্য স্ত্রীকে বুটিক ব্যবসায়ী ও টিউশনি করিয়েছেন দাবি করেন। কিন্তু দুদকের তদন্তে স্ত্রীর বুটিক ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মূলত অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে হাশেম বাড়িটি নির্মাণ করেন।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার আবুল হাশেম ১৯৮৮ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ২০২২ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) পদে থাকাকালে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান।
দুদক সূত্র জানায়, চাকরি জীবনে ঘুষ–অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালে আবুল হাশেম ও তার স্ত্রীর সম্পদবিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। পরে তারা সম্পদবিবরণী জমা দেন। বিবরণী যাচাই–বাছাই করে দুদক দুজনের বিরুদ্ধে প্রায় ১১ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৬২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।