উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার বাস ও বোয়িংয়ের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে আগামী ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে বিমান কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান।
রোববার (৭ জুলাই) সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, মূল্যায়ন কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার আগে পর্যন্ত বিমান কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে না।
কবে নাগাদ এটি চূড়ান্ত হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আগামী ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে এটার প্রক্রিয়া শেষ হবে। এবারের বাজেট থেকেই আমাদের এটার জন্য অর্থায়ন করতে হবে।
কতটি বিমান কেনা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০টির মতো বিমান কেনার পরিকল্পনা আমাদের। আপাতত কতটি বিমান কিনবো সেটা নির্ভর করে যে অর্থনৈতিক প্রস্তাব এসেছে সেটার ওপর ভিত্তি করে তারা (মূল্যায়ন কমিটি) আমাদের কী রিপোর্ট করে। তবে অবশ্যই দুই থেকে চারটির মতো হতে পারে।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে বিমানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিভিন্ন আমেরিকান কোম্পানির কথা বলেছেন, যারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। আগামীতে সেটা আরও সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। আমিও তাকে জানিয়েছি যে আমরা যেভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে কেনাকাটা করি, ইভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে সেভাবেই করবো। সবসময় আমরা একটা ভালো প্রোডাক্ট নিতে চাই এবং আগামীতেও তাই নেবো।
তিনি বলেন, আলোচনায় তিনি (রাষ্ট্রদূত) বোয়িংয়ের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, আগামী দিনে আমরা যখন বিমান কিনবো সেখানে কী ধরনের কোন প্লেন কিনবো, সেটা মূল্যায়ন করছি। মূল্যায়ন শেষ হয়নি, সেটা যখন শেষ হবে, ইভ্যালুয়েশন কমিটি যে কোম্পানিকে সুপারিশ করবে, সেই কোম্পানি থেকে কেনার বিষয়টি আমরা বিবেচনা করবো।
আমরা শুনেছি এয়ার বাস থেকে বিমান কেনার বিষয়টি অনেকটা চূড়ান্ত- এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, আপনার প্রশ্নের মধ্যে উত্তর আছে।
তিনি বলেন, আমরা আরও নতুন বিমান কিনতে চাই। কারণ সেটা আমাদের জন্য প্রয়োজন। আপনারা জানেন এ বিষয়ে বিভিন্ন এক্সপার্টের নিয়ে একটি মূল্যায়ন কমিটি কাজ করছে।
‘আমি হাসতে হাসতেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছি- বাংলাদেশে কোনো জিনিস বিক্রি করার জন্য একটি ব্রিটিশ এবং একটি আমেরিকান কোম্পানির মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা আমি অতীতে দেখিনি। আমি দেখলাম তোমরা এটা নিয়ে দারুণ কম্পিটিশনে আছো।’ বলেন মন্ত্রী।
বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, এটা প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবী। আমরা দু’টার মধ্যে যেখান থেকে ভালো অফার পাবো, এখানে ফাইন্যান্সিয়াল অফার আছে, অন্যান্য বিভিন্ন রকম বিষয় আছে, সবকিছু মিলে যেটা ভালো হবে সেটা কিনবো। এটা ঠিক যে এয়ারবাসও আমাদের ভালো অফার দিয়েছে।
এর আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, তিনি (রাষ্ট্রদূত) আজও আমাকে এ কথা বলেছেন। আমি বলেছি মিডিয়াতে যখন কোনো খবর আসে সেটা খবর হিসেবে দেখবেন। আপনি জানেন যে বাংলাদেশ সরকার এখনো এটাকে ইভ্যালুয়েশন করছে, সেটাই ফাইনাল খবর। পত্রপত্রিকা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে বিভিন্ন কারণে নিউজ করে। নিউজগুলো পড়বেন, সেখান থেকে জানার চেষ্টা করবেন, আমিও তাই করি, পেপার পরে জানার চেষ্টা করি। আমি ফাইনালি জানি ইভ্যালুয়েশন কমিটি রিপোর্ট না দেওয়া পর্যন্ত ফাইনাল হবে না।
বোয়িং থেকে বিমান না কিনলে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। এমন একটা কথা আসছে- এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হবে কেন? আমি এটার কোনো কারণ দেখি না। আমাদের দিক থেকে এর কোনো কারণ দেখি না, আমেরিকার দিক থেকেও কারণ দেখি না।
‘আমেরিকা অতীতে অনেক বাংলাদেশি কেনাকাটায় অংশগ্রহণ করেছে, সেখানে অন্য কোনো কোম্পানিকে আমরা দিয়েছি। আমার মনে হয় এই কথাগুলো সাইডলাইনের কথা। অবশ্যই আমেরিকান কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য বিক্রি করতে চায়, একইভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন জায়গায় অফার দিচ্ছে। যেটা আমাদের কাছে ভালো মনে হবে, যেটাতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হবে, সেটাই কেনা হবে।’ যোগ করেন বিমানমন্ত্রী ফারুক খান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।