চাঁদপুরে পারভীন আক্তার হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আলোচিত সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর দণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এ রায় ঘোষণা করেন।
তবে অপর দুই আসামিকে ফাঁসির দণ্ডের পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ২০১৮ সালের ৬ মার্চ রসু খাঁসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) আবদুল মান্নান । বাকি আসামিরা হলেন, জহিরুল ইসলাম ও মো. ইউনুছ।
পরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি হাইকোর্টে (ডেথ রেফারেন্স) পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিল করেন। গত ৪ জুলাই এ আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৯ জুলাই দিন ধার্য করা হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রসু খাঁ চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামের মুন খাঁ ওরফে আবু খার ছেলে, জহিরুল পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের সৈয়াল বাড়ির মো. মোস্তাফা এবং ইউনুস একই গ্রামের মৃত মিসির আলীর ছেলে।
মৃত পারভীন ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা ইউনিয়নের পালতালুক গ্রামের আবুল কালামের স্ত্রী। তার বাবার নাম মৃত কাজল খান।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ জুলাই রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে রসু খাঁ ও অপর আসামিরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য হাঁসা গ্রামের নির্জন মাঠে পারভীন নামে এক নারীকে ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন স্থানীয়দের দেওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পারভীনের স্পর্শকাতর অঙ্গে ও দুই পায়ের উরুতে সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ২০টি ক্ষতচিহ্ন ছিল।
পারভীন অজ্ঞাতপরিচয় হওয়ায় তৎকালীন সময়ের ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মীর কাশেম আলী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর রসু খাঁ ভালোবাসায় পরাস্ত হয়ে এক সময় সিরিয়াল কিলারে পরিণত হয়।
২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর বাজার উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর এক এক করে তার লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের চিত্র বেরিয়ে আসে। নিজের মুখে স্বীকার করে ১১ নারী হত্যার কথা। পরে তাকে এবং সহযোগী দুইজনকে পারভীন হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। আটকের আড়াই মাস আগে পারভীনকে হত্যা করা হয়। টার্গেট ছিল ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর। রসু যাদের হত্যা করেছে তারা সবাই ছিল গার্মেন্টস কর্মী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সময়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশফিকুর রহমান ঘটনা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
রায়ের দিন চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাবিবুল ইসলাম তালুকদার বাংলানিউজকে বলেছিলেন, মামলাটি দীর্ঘ নয় বছর চলমান থাকা অবস্থায় আদালত ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন এবং আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর (৯) এর ৩ ধারা এবং দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় এ রায় দেওয়া হয়। রসু খাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা ছাড়াও আদালতে আরও সাতটি মামলা রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।