ভিডিও

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা পাবে না তো রাজাকারের নাতিরা পাবে?

আন্দোলন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

আমার পিয়নের কাজ করেছে, সেও ৪০০ কোটি টাকার মালিক

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২৪, ০৯:৪৩ রাত
আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২৪, ০৯:২২ সকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে টানা দুই সপ্তাহ সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষকরা। এ দুই ইস্যুতে দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

চীন সফর নিয়ে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে আলোচিত দুই ইস্যুতে সরকারপ্রধানের অবস্থান কী, তা শোনার অপেক্ষায় ছিলেন আন্দোলনকারীসহ দেশবাসী। তবে সেখান থেকে কোটা সংস্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো আরও ‘কঠোর’ অবস্থানের বিষয়টি উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। শুধু এই আন্দোলন নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কড়া বার্তা দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের কিছুই করার নেই বলে আবারও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলানোয় আন্দোলনকারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এ আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার সম্পর্কে নেতিবাচক যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছে, তা সহ্য করার মতো নয় বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে তারা একবার আন্দোলন করেছিল। সেটা আন্দোলন তো নয়, সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম ঠিক আছে, সব কোটাই বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলাম দেখেন কী অবস্থাটা হয়। সেটা এখন তো দেখতে পারছেন, কী অবস্থার তৈরি হয়েছে?’

সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে? এমন প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবনপণ লড়েছেন, তাদের পরিবার এ কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস এরা পায় কীভাবে? মুক্তিযুদ্ধ তাদের এখন ভালো লাগে না। তাহলে তো তাদের পাকিস্তান চলে যেতে হবে।’

আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলেও সরকার কীভাবে চলে, বিচার বিভাগ কীভাবে চলে; তা নিয়ে ধারণা নেই বলেও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবেই হোক কোটা বাতিল করেছিলাম। এখন সেটা যখন আদালতে গেলো। তখন তো সেটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন আবার আন্দোলন করছে, তারা তো আইন-আদালত মানবে না। সংবিধান কী, সেটা তারা চেনে না। সরকার কীভাবে চলছে, সেই জ্ঞানও নেই। হ্যাঁ, পড়াশোনাটা করছে, ভালো রেজাল্ট হয়তো করছে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়েও তাদের জানা উচিত, শেখা উচিত।’

ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা : সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিল করার দাবিতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে আন্দোলন করছেন, সেটা ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে চলছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের) মধ্যে ভ্রান্ত কিছু ধারণা আছে। সেগুলো আমি নোট করে রেখেছি। তাদের অবশ্য জানানোও হয়েছে। তারপরও তারা আন্দোলন চালাচ্ছেন, চালাতে থাকেন। টায়ার্ড (ক্লান্ত) হোক, তখন কিছু বলবো।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘শিক্ষকদের যে দাবি ছিল, সেটা আমাদের পাঠিয়েছেন। তাদের বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। আমি সেগুলো নোট নিয়েছি। তাদের ভুল ধারণা যে পেনশন ফান্ড আছে, আসলে ফান্ড নেই। তাদের টাকা থেকেই পেনশন দেওয়া হয়। সর্বজনীন পেনশন স্কিম করে দিয়েছি সবার জন্য। এই যে সাংবাদিকরা, আজকে তাদের চাকরি না থাকলে কিছুই করার নেই। কীভাবে চলবে?’

তিনি বলেন, ‘বেতন নিয়েও তাদের ধারণা এতই বিভ্রান্তিকর যে বলার মতো না। আরেকটা হলো- কোন বছর থেকে প্রত্যয় স্কিম চালু হবে? ২০২৪ নাকি ২০২৫ সালের জুলাইয়ে। সেটাও আমরা ক্লিয়ার (স্পষ্ট) করে দিয়ছি।’

আমার পিয়নের কাজ করেছে, সেও ৪০০ কোটি টাকার মালিক : পিএসসির গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী অঢেল সম্পদের মালিক। গাড়িচালক কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার বাসার পিয়ন ছিল। সেও নাকি ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। পরে তাকে ধরা হয়েছে। খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ড্রাইভার কীভাবে এত কোটি কোটি টাকার মালিক হলো, সেটা কীভাবে বলবো। তাদের অপকর্ম আমরা ধরছি বলেই তো এখন জানতে পারছেন। এতদিন তো আপনারা জানতে পারেননি।’

রোববার বিকেলে চীন সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথমে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে, তাদের থামিয়েছি। এখন আমরা দুর্নীতি নিয়ে কাজ করছি। দুর্নীতবাজদের ধরছি। এটা চলতে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাকে বলেন, এটা করলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে। আমি সেটা মনে করি না। যারা অপরাধ করছে, দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে; তাদের ধরতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।’

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঠিক আছে, পুলিশের গায়ে হাত দিলে ছাড় নয় : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে, ঠিক আছে। পুলিশের গায়ে হাত দিক, তখন আইন আপন গতিতে চলবে। কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা কোটা বাতিলের পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা আদালতে গেছেন। আদালত কোটা রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যখন এটা আদালতে গেছে, তখন সরকারের কিছু করার নেই। কিন্তু না, তারা আন্দোলন করেই যাবে। শেখ হাসিনা বলেন, আদালত থেকে যতক্ষণ কোটা সংস্কার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসবে, ততক্ষণ আমরা কোনো সিদ্ধান্তে যাবো না। আদালত থেকে সমাধান আসলে সেটাই সিদ্ধান্ত।

সরকার কীভাবে চলে সেই ধারণাও তো এসব কোটা আন্দোলনকারীর নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবেই হোক কোটা বাতিল করেছিলাম। এখন সেটা যখন আদালতে গেলো। তখন তো সেটা নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আন্দোলন করছেন, তারা তো আইন-আদালত মানবে না। সংবিধান কী সেটা তারা চেনে না। সরকার কীভাবে চলছে, সেই জ্ঞানও নেই। হ্যাঁ, পড়াশোনাটা করছে, ভালো রেজাল্ট হয়তো করছে। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়েও তাদের জানা উচিত, শেখা উচিত।’

২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেবে চীন : চারটি প্যাকেজের আওতায় চীন বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সফরে আমি গত ৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করি। ৮ জুলাই বেইজিং পৌঁছালে বিমানবন্দরে আমাকে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়।

তিনি বলেন, ৯ জুলাই সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আমি এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। এরপর দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বাংলাদেশ ও চীনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

সরকারপ্রধান বলেন, সম্মেলনে আমি চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই। এ সময় অবকাঠামো, আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাত, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুদান ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ- চার প্যাকেজে অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে চীন। এই চারটি প্যাকেজের আওতায় চীন বাংলাদেশকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেবে।

আবাসন-হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী চীনা ব্যবসায়ীরা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট (আবাসন) ও হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চীনা ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশে তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও সেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করলে চীনের ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান। একই সঙ্গে এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সফরে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করা হয়। ৮ জুলাই বেইজিং পৌঁছালে বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। ৯ জুলাই সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আমি এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। এরপর দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না-শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বাংলাদেশ ও চীনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

তিনি বলেন, সম্মেলনে চীনা ব্যবসায়ীদের বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ সময় অবকাঠামো, আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাত, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগের কথাও বলা হয়।

তিনি বলেন, চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিডা, বিএসইসি এবং চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং আয়োজিত এ সম্মেলনে চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টং ঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন বক্তব্য দেন এবং তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের ১০টি কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির ১৬টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়।

ভারত সফরে গেলেই বলে দেশ বিক্রি করে দিয়েছি : দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফর করছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এবারের চীন সফরে ২১টি সমঝোতা সই হয়েছে। যারা সফরের সমালোচনা করছেন, তারা কি জেনে-বুঝে এসব করছেন? নাকি শুধুই আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে? ভারত সফরের পর বলা হলো- দেশ বেচে দিয়েছি, এখন বলছে চীন কিছু দেয়নি। এগুলো যারা বলেন, তাদের মানসিক অসুস্থতা আছে। তাছাড়া, এভাবে এসব নিয়ে বানোয়াট প্রশ্ন তোলার কথা না।

এ সময় সফর সংক্ষিপ্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রচন্ড জ্বরের কারণে পুতুল আমার সঙ্গে চীনে যেতে পারেনি। মাত্র ছয় ঘণ্টা আগে দেশে ফিরেছি বলে এত সমালোচনা-তোলপাড়। অফিসিয়াল কাজ শেষ হলে, সফরে গিয়ে শপিং বা ঘোরাঘুরি করি না। এবারই প্রথম না, এর আগেও অনেকবার এভাবে সফর শেষ করে চলে এসেছি বলে জানান তিনি।

সমালোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ভারতের গণমাধ্যমে চীন সফর নিয়ে, নেতিবাচক সংবাদ হচ্ছে। সেটা নিয়ে বলার কিছু নাই। কিন্তু ভারতবিরোধীরা আবার তাদের গণমাধ্যমের সংবাদে ভর করেই সমালোচনা করছে। কিছু বলার নেই এ বিষয়ে।

উন্নয়নবিরোধীরা চোখ থাকতে অন্ধ ও কান থাকতে বধির উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে না, তাদের কাছে আর কি আশা করা যায়?

এ সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার বিষয়ে চীন তাদের অঙ্গীকার পুনরায় ঘোষণা করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

পানি সমস্যা ভারতের সঙ্গে, তারাই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করুক: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীন তিস্তায় বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। কিন্তু পানি সমস্যা যেহেতু ভারতের সঙ্গে তাই তারাই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করুক। সেটাই ভালো হবে সবার জন্য। এখানে কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই। সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুদমুক্ত ঋণসহ ৪টি খাতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে চীন। অথচ মানসিকভাবে অসুস্থ একটি গোষ্ঠী চীন-ভারত সফর নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে।

প্রশ্নফাঁসের সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবো: বিসিএসের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে যারা উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি করছেন, খুঁজে বের করা গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নেবো না কেন? তাদের তো চাকরি করার কোনও অধিকারই থাকবে না। এখন সেটা খুঁজে দেবে কে? ওরা যদি বলতে পারে যে অমুকের কাছে বিক্রি করেছে তখন প্রমাণ করতে পারলে সেটি দেখা যাবে।’

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হলেও ওই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে যারা অফিসার হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমিও সেটি বিশ্বাস করি, বেনিফিসিয়ারি যারা, তাদেরও ধরা উচিত। তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ করবে না। কারণ, ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে, উভয়ে অপরাধী। এটা মাথায় রাখতে হবে। প্রশ্নপত্র যারা ফাঁস করে, আর সেই প্রশ্নপত্র যারা ক্রয় করে দুজনেই অপরাধী। এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এদের খুঁজে বেরটা করবে কে? সাংবাদিকরা যদি চেষ্টা করে বের করে দেয়, ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

তিনি বলেন, আমি একটা কথা বলি, ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা হয়েছিল ২০০২ বা ২০০৩ সালে। বিএনপির আমলে যত পরীক্ষা হতো আর যত চাকরি হতো এটা কোনও পরীক্ষা-টরীক্ষা না। ওই হাওয়া ভবন থেকে তালিকা পাঠানো হতো আর সেই তালিকায়ই হতো।’

সে সময় ঢাকা কলেজে পরীক্ষা হয় এবং একটা বিশেষ কামরা তাদের জন্য আলাদা রাখা হয়। যেখানে বসে তারা পরীক্ষা দিয়ে পাস করে চাকরিতে ঢোকে। তখন কোনও উচ্চবাচ্য নাই। এই যে প্রশ্নপত্র ফাঁস বা এই অনিয়মগুলো তো তখন থেকেই শুরু। আমরা সরকারে আসার পর ২০০৯ সালে এই জিনিসটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের ওখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

অনেকে মনে করতে পারে, আওয়ামী লীগের সময় প্রশ্নফাঁস শুরু হয়েছে, তা ঠিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের সময়ে শুরু হয়নি, শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের আমলে। খালেদা জিয়ার আমলে আরও একধাপ বেশি। তখন তো তালিকা আসলো, সব কিছুর তালিকা এবং যা তালিকা ওটা মানতেই হবে, না মানলে কেউ জানে বেঁচে থাকতে পারবে না। এটা ছিল বাংলাদেশের অবস্থা, এটা ভুলে গেলে তো চলবে না।’

২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থা কী ছিল, প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ কোনও কথা বলতে পারছে? কী অবস্থা ছিল? এই যে অনিয়মগুলো করে রেখে গেছিল, সেটিকে আবার সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসছিলাম। ২০১৮ সালের পর থেকে আবার কিছুটা এরা ফাঁক পেয়ে যায়। কিন্তু সেগুলো বহুদিন থেকে পেছনে লেগে থেকে থেকে এখন ধরতে পেরেছি। ধরা পড়েছে, তদন্ত হবে, বিচার হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS