মাহফুজ মুকুল : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়ে গোটা দেশ। এই আন্দোলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সবধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ করতে হয় চলমান পরীক্ষাগুলোও। এতে করে অনিশ্চয়তায় ভুগতে থাকে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় পড়াশোনা থেকেও হাত গুটিয়ে ফেলে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাসায় অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। আবার ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ থাকায় করোনাকালীন লকডাউনের সময় ইন্টারনেট নির্ভরশীল শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই প্রচলিত নানা খেলাধুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
যানবাহন বন্ধ থাকায় রাস্তাঘাট কয়েকদিন ধরে ফাঁকা। ফলে ফাঁকা রাস্তায় ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডিসহ নানা খেলা খেলতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। স্কুল পড়ুয়া অনেককেই দেখা যায় খেলার সাথীদের নিয়ে মাঠে খেলতে নেমে যায়। রিকশা-যানবাহনের কমতি থাকায় সড়কগুলোকেই খেলার মাঠ বানিয়ে খেলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা যায় তাদের। এ সময় বড়দেরকেও শিশু কিশোরদের খেলায় উৎসাহ দিতে দেখা যায়।
কলাবাগানে ধানমন্ডি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী মাহিন বলেন, এমন ফাঁকা রাস্তা দেখিনি। ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে বেশ ভালো লাগছে। এখন বন্ধুরা মিলে খেলতে নামবো। ক্রিকেট খেলতে নামবো। কতক্ষণ খেলবেন এমন প্রশ্নে মাহিন জানান, রাস্তা ফাঁকা, এমন ফাঁকা অবস্থা আর পাব না। তাই বেশি সময় পর্যন্ত খেলবো।
মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়- অলিগলিতে কিশোর-কিশোরীরা খেলাধুলা করছে। লালমাটিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে। বান্ধবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ইন্টারনেট ছাড়া সময় কাটছে না। ব্যাডমিন্টন খেলেছি আগেও। তবে ফাঁকা রাস্তায় খেলার মজাটা বেশ রোমাঞ্চকর। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারি না। পড়ালেখার চাপ কমিয়ে খেলতে পারায় কয়েকদিনের শারীরিক ব্যায়ামটাও হয়ে গেছে। তাছাড়া আগামীতে ইন্টার স্কুল এন্ড কলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নাম লিখাবো বলে ভাবছি।
এদিকে কয়েকদিনের কারফিউতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় মহল্লা ভিত্তিক নানান ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও দেখা যায়। রায়েরবাজার স্কুলের শিক্ষার্থী সায়েম শিকদার জানান, কারফিউ জারির কারণে রাস্তা ফাঁকা থাকায় প্রথমে এলাকার ছেলেদের নিয়ে আমরা ক্রিকেট খেলা শুরু করি। অন্যান্য এলাকার ছেলেরাও আমাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চাচ্ছে। আজকে দুই দলের এক টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন স্থানীয় বড় ভাইয়েরা।
এদিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক খেলাগুলোই আনন্দের খোরাক হিসেবেই বেছে নিয়েছেন। এতে করে অভিভাবকদের মনেও স্বস্তি ফিরেছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলোতে অনেকে খেলতে অনীহা থাকায় রাতে সড়কবাতির নিচেই খেলতে দেখা গেছে। এছাড়া ঘরে বসে না থেকে দৈনন্দিন কাজের শেষে পরিবার নিয়ে অনেকেই রাস্তায় খেলতে দেখা যায়।
বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করেন এমন এক কর্মকর্তা জানান, গ্রামের বাড়িতে রাস্তায় বের হতে খেলতে বেগ পেতে হয় না। কিন্তু শহরের অলিগলিতেও নানান গাড়ির চাপে হাঁটতেই যেখানে কষ্ট হয় সেখানে হেঁটে বেড়ানো কিংবা খেলাধুলা করাটা বেশ কষ্ট সাধ্য। তাই কারফিউ জারির কারণে রাস্তা ফাঁকা থাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তাতেই খেলতে নেমে পড়েছি। এদিকে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে শিগগিরই চালু হবে নেট সুবিধা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।