ভিডিও

আতঙ্কে ফাঁকা সচিবালয়

প্রকাশিত: আগস্ট ০৬, ২০২৪, ০২:১৬ দুপুর
আপডেট: আগস্ট ০৬, ২০২৪, ০৩:২৬ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

ভয়ে-আতঙ্কে সচিবালয় থেকে বের হয়ে গেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর ১২টা বাজার কিছু আগে কর্মস্থল ছাড়তে শুরু করেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এক ঘণ্টার মধ্যে দুপুর ১টার আগেই ফাঁকা হয়ে যায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভয়ে ও আতঙ্কে কর্মসংস্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ কারণে অফিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই সবাই কর্মসংস্থান ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে কে ছুটি দিয়েছেন তার উত্তর কেউ দিতে পারেননি।
সচিবালয়ে অবস্থান করে দেখা যায়, দুপুর ১২টা বাজার কিছু আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল থেকে বের হতে শুরু করেন। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে কর্মকর্তাদের বের হয়ে যাওয়ার লম্বা লাইন বাঁধে সচিবালয়ের প্রধান ফটকে।
এরপর সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে এসে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের একটি অংশ পায়ে হেঁটে সচিবালয় ছাড়ছেন। আর একটা অংশ তাদের গাড়িতে করে সচিবালয় থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে সচিবালয় খালি হয়ে যায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় দুপুর ১টার আগেই খালি হয়ে যায়। মন্ত্রণালয়ের অফিসগুলো খালি পড়ে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলছে। অধিকাংশ কক্ষের জানালা বন্ধ, তবে কিছু কক্ষের জানালা খোলা দেখা গেছে।
সচিবালয়ে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী মিজানুর রহমান বলেন, সবাই অফিস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাই আমরাও চলে যাচ্ছি। শুনেছি, আমাদের কেউ নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এ পরিস্থিতিতে অফিস করা সম্ভব না।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শামীমা বলেন, আমি দুই বছর ধরে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে আছি। আজ নির্ধারিত সময়ে অফিসে আসি। অফিসে আসার পর উপর থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তাই বাসায় চলে যাচ্ছি।
কে ছুটি দিয়েছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি উপর থেকে বলছে সচিবালয় খালি করে দিতে। কেউ নিরাপত্তা দিতে চাচ্ছে না। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের আর এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ে হামলা হতে পারে, মানুষের মধ্যে এমন আতঙ্ক রয়েছে। এ কারণে সচিবালয় থেকে সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে।
সচিবালয়ে সব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর পাল্টে গেছে সচিবালয়ের চিত্র। সব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নামফলক নামানো হয়েছে। খাঁ খাঁ করছে তাদের দপ্তর।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির দিনে সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করার পর অন্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা ত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হবে।
সোমবার থেকে অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে, সব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নামফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মন্ত্রীর দপ্তরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, শুধু মন্ত্রীর নামটি সরানো হয়নি, পুরো নামফলকটিই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যে দপ্তর সব সময় সরগরম থাকতো সেখানে এখন সুনসান নীরবতা।
আইন মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে দেখা গেছে, নাম ফলকটি থাকলেও সেখান থেকে সরে গেছে আনিসুল হকের নাম। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের নাম ফলক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তাদের ইউনিফর্ম রেখে সাদা পোশাকে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গেছে।
তবে সচিবরাও অফিস করেছেন খুবই কম। দু-একজন সচিব আসলেও তারা অল্প সময়ের মধ্যে আবার সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যান।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তবে দুপুর পৌঁনে ১২টার দিকে হঠাৎ করেই আতঙ্কে সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বের হয়ে যান।
গত বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ১১ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। ওই মন্ত্রিসভায় সদস্য ছিল প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ জন। পরে ১ মার্চ আরও সাতজন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
পরে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা হয় প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৪ জন। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ জন মন্ত্রী ও ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পাঁচ বছরের জন্য মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তবে এ মন্ত্রিসভা প্রায় সাত মাসের মাথায় বিলুপ্ত হলো।  



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS