ভিডিও

‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুষ হিসেবে বস্তায় বস্তায় টাকা নিতেন’

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৪, ০৩:৫৬ দুপুর
আপডেট: আগস্ট ১৬, ২০২৪, ১২:৩৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে ‘বস্তায় বস্তায় ঘুষ বাণিজ্যের’ অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সংস্থাটির উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ঘুষ হিসেবে বস্তায় বস্তায় টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এই টাকা আদায় করা হতো। এ জন্য তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়। এই সিন্ডিকেটের অন্য সদস্য ছিলেন যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন। টাকা আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই কামাল-হারুন সিন্ডিকেট।’ একপর্যায়ে হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও এই মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ, দুর্নীতি তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতেন বলেও জানান দুদক’র এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি এড়াতে টাকাগুলো দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে।’

অভিযোগের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিতো এই চক্র। এই সিন্ডিকেটের আশির্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনও জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৩ কোটি টাকা নিতো এই সিন্ডিকেট।’ উদাহরণ তুলে ধরে দুদক’র এই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্ল্যা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর মাস খানেক আগে হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন মোল্ল্যা নজরুল। পরবর্তী সময়ে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর হোটেল ওয়েস্টিনে হারুন অর রশীদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি। এসময় পূর্বের চেকটি ফেরত নিয়ে মোল্ল্যা নজরুল ৩ কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরবর্তী সময়ে বাকি টাকাও দেওয়া হয়। 

এসব টাকা আসাদুজ্জামান খান কামালের ফার্মগেটের বাসায় বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হতো বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান (জ্যোতি) পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বদলি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। কামাল তাকে জানান, হারুন অর রশীদের সঙ্গে কথা বলতে। এ নিয়ে গত জুন মাসে বাসায় কলহ তৈরি হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে বাসায় ব্যাপক-ভাঙচুর করেন জ্যোতি।

এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থাকে আসাদুজ্জামান খান কামালকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দিতে হতো বলেও দাবি এই দুদক কর্মকর্তার। তিনি বলেন, এরমধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে। তারপরও অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ফার্মগেট এলাকায় কামালের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেওয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে।
ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনও সার্কুলার হলেই সাবেক এই মন্ত্রীর দফতর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হতো বলেও জানান মো. আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেই মোতাবেক তাদের নিয়োগ দিতে ফায়ার সার্ভিসকে বাধ্য করতেন সাবেক এই মন্ত্রী। ২০২৩ সালে ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। এরমধ্যে ছিলেন ৪৩৬ পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্দেশে সেই তালিকা মোতাবেক নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস।’

সূত্রমতে, নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা নিতো কামাল-হারুন সিন্ডিকেট। আলোচ্য অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে কমিশন একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS