ভিডিও

শঙ্কায় বাংলাদেশ, সিকিমে উত্তাল তিস্তা

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৪, ১২:০০ রাত
আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২৪, ০২:৫১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

ভারি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের আট জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

আজ বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। তিনি জানান, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও খাগড়াছড়ি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যা আরও নতুন নতুন অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, দেশের সাত নদীর ৯ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। আরও কিছু নদীর পানি বিপদসীমার উপরে উঠে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তিস্তা নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের শঙ্কা বাড়ছে।

ইতোমধ্যে পানির চাপে সৃষ্ট ভূমিধসে গতকাল মঙ্গলবার সিকিমের তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী একটি বাঁধ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের সরকারি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালনাকারী সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন (এনএইচপিসি)।

কয়েক দিন ধরেই ওই অঞ্চলে পাহাড় থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছে এনএইচপিসি। তারা বলছে, গত বছর হিমবাহ ভেঙে সিকিমে যে বন্যা হয়েছিল, সেই বন্যায় প্রকল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকেই এই বাঁধ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সেটি মেরামতের কাজ চলছিল। এই নিয়ে গত এক বছরে সিকিমে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দ্বিতীয় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

এনএইচপিসি জানিয়েছে, ৫১০ মেগাওয়াট তিস্তা-৫ বিদ্যুতের যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেটি মঙ্গলবারের ভূমিধসে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাই ভোল্টেজ সাবস্টেশন। এনএইচপিসির বিশেষজ্ঞ দল পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে বর্তমানে প্রকল্পটি পরিদর্শন করছে।

গত কয়েকদিন ধরে সিকিমে লাগাতার ধস নামছে। বন্ধ জাতীয় সড়ক। তারই মধ্যে বালুতারে গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি ধস নেমেছে। এখানেই তিস্তা নদীর উপর বাঁধ দিয়ে ৫১০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎপ্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার পাহাড়ের ওপর আচমকাই কম্পন হয়। এরপর হুড়মুড় করে গাছপালা-সহ পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে। সেই ধস গিয়ে পড়ে বাঁধের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের একটি অংশ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। আর্তনাদ করতে করতে মানুষ পালাতে থাকেন।

সিকিমে তিস্তার ওপর একাধিক বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও। এরপর পশ্চিমবঙ্গেও গাজলডোবায় তিস্তার উপর বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বালুতরে যে জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে, সেটি নির্মাণ করেছিল ন্যাশনাল হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন। তিস্তার ওপর স্টেজ ফাইভ বাঁধ তৈরি করেছিল তারা। সেই বাঁধটি এদিন ভেঙে যায়।

এর আগে, গতবছর মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেঙে গিয়েছিল চুংথাংয়ে তৈরি আরেকটি বাঁধ। এখনো সেই বাঁধ পুরোপুরি ঠিক করা যায়নি। এদিন যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গও তৈরি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।

পরিবেশবিদ অরূপ গুহ বলেছেন, “এমন যে হবে সে আশঙ্কা ছিলই। পাহাড়ে এবং ডুয়ার্সে তিস্তার ওপর একের পর এক প্রকল্প তৈরি হয়েছে। নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে অবৈজ্ঞানিকভাবে। পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখন বোঝা যাচ্ছে।”

তিস্তার ওপর তৈরি বাঁধগুলির মেয়াদকাল পূর্ণ হতে চলেছে। অথচ সম্পূর্ণ প্রকল্পই এখনো রূপায়ন হয়নি। ফলে যেকোনো সময় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। এদিনের বিপর্যয় তারই এক ইঙ্গিত।

এদিকে এ ঘটনার ফলে গাজলডোবায় চাপ পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ সিকিমে প্রবল বৃষ্টিও হচ্ছে। তিস্তায় পানি দ্রুত বাড়ছে। গাজলডোবায় পানি ছাড়লে তার নিচের অংশে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS