স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দেশের ১২টি জেলার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও প্রবল স্রোতের কারণে বন্যার পানিতে ডুবে, পাহাড় ধসে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত সোমবার (১৯ আগস্ট) থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন।
নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। গত বুধবার (২১ আগস্ট) থেকে ফেনীসহ আট জেলায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। তবে তার কয়েকদিন আগে থেকেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে অনেক জেলায়। এরপর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে বৃহস্পতিবার আরও চার জেলার অনেক জায়গা তলিয়ে যায়।
বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো- ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার।
কক্সবাজার
কক্সবাজারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে আব্দুস শুক্কুর (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার মেয়ে মোস্তফা খানম (২০) গুরুতর আহত হয়েছেন।
কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন, রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২) এবং ঈদগড় ইউনিয়নের বৈদ্য পাড়ার চচিং রাখাইন (৫৫)।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন- গর্জনিয়া ইউনিয়নের ছালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলম (৩৫) এবং ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লম্বরিপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে মো. জুনাইদ (১০)।
চট্টগ্রাম
বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারীতে বন্যাদুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো. জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ঘরে বন্যার পানি ঢুকে গেলে সাকিব আইপিএসের সংযোগ খোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
কুমিল্লা
কুমিল্লায় বৃষ্টি ও বন্যার প্রভাবে তিনদিনে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার (২১ আগস্ট) মারা যান তিনজন, সোমবার (১৯ আগস্ট) মারা গেছেন একজন।
সোমবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে ওই আইনজীবী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে যান তিনি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
বুধবার চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় মাথায় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। মধ্যরাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি ব্রিজের নিচে তলিয়ে যান কেরামত আলী। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলের কাছেই তার মরদেহ ভেসে ওঠে।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় আরও একজন মারা গেছেন। তবে তার নাম এখনো জানা যায়নি।
নোয়াখালী
বুধবার নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় বন্যার পানি ঘরে ঢুকে আইপিএস নষ্ট হওয়ায় সেটি মেরামত করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কাকন কর্মকার (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
রাঙামাটি
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় চেঙ্গী নদীতে ডুবে শ্রেষ্ট চাকমা (০৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের কুকুরমারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে সুবর্ণা আক্তার (২৩) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে।
গত বুধবার ঘরে পানি ওঠায় পাশের বাড়ি যাওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে একটি গর্তে পড়ে ডুবে যান তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।