হাসিনা ও কাদেরের সঙ্গে এবার হত্যা মামলার আসামি বগুড়ার ৩ সাংবাদিক
স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা অফিস : সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকায় আরও চারটি হত্যা মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ১০০টি মামলা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ওই দিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খুন, গুম ও গণহত্যার নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১৩ আগস্ট প্রথম রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা হয়। এরপর এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মোট ১০০টি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
হত্যা মামলাগুলো মধ্যে ১৩ আগস্ট একটি, ১৪ আগস্ট একটি, ১৫ আগস্ট তিনটি, ১৬ আগস্ট ঢাকা ও বগুড়ায় পৃথক দুটি, ১৭ আগস্ট ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক তিনটি, ১৮ আগস্ট ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আটটি, ১৯ আগস্ট ঢাকা ও চট্টগ্রামে চারটি, ২০ আগস্ট ঢাকা, বগুড়া, জয়পুরহাট, রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জে দশটি, ২১ আগস্ট ঢাকায় পাঁচটিসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ফতুল্লা, আশুলিয়া ও চট্টগ্রামে দশটি, ২২ আগস্ট ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দশটি, ২৩ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশে আরও ১৪টি এবং ২৫ আগস্ট বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাসহ দুটি, রাজধানীতে ৯টিসহ মোট ৯৯টি মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও এসব মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সাংসদ ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও এসব মামলায় আসামি হচ্ছেন।
হাসিনা ও কাদেরের সঙ্গে এবার হত্যা মামলার আসামি বগুড়ার ৩ সাংবাদিক : বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মো. শিমুল (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আসামি করে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে বগুড়ার তিন সাংবাদিককেও।
তারা হলেন-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মাহমুদুল আলম নয়ন, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চল ব্যুরো প্রধান হাসিবুর রহমান বিলু, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের বগুড়া প্রতিনিধি জে এম রউফ। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ছাড়াও ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে বগুড়া সদর থানায় ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি করেন নিহত শিমুলের স্ত্রী শিমু বেগম।
এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ জনকে। শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের ছাড়াও মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, বগুড়া-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু।
এ নিয়ে বগুড়ায় গত ১১ দিনে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলো।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের প্রধান সড়কে ঝাউতলা এলাকায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এবং সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, রাগেবুল আহসানসহ চারজনের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা পিস্তল, কাটারাইফেলসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা চালান।
এসময় ছাত্র-জনতার মিছিলে ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলা করেন ওই তিন সাংবাদিকসহ এজাহারভুক্ত ৩৩ জন। মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, হামলার সময় শিমুল ছাত্র-জনতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়েন বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি টি জামান, বগুড়া পৌরসভার কাউন্সিলর আরিফুর রহমান, আবদুল মতিন সরকারসহ অন্য আসামিরা।
বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিমুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিমুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইহান ওলিউল্লাহ জানান, ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।