নিউজ ডেস্ক: গাজী টায়ারস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ধংসস্তুপ হওয়া কারখানার ভিতরে প্রবেশ করে নিহতদের মাথার খুলি ও হাড় বের করে এনেছেন বলে দাবি করছেন স্বজনেরা। সপ্তাহকাল হলেও ভবনে উদ্ধারকাজ ঝুঁকিপূর্ণ বলে ‘সার্চ’ অভিযান শুরু করেনি তদন্ত কমিটি ও সংশ্লিষ্টরা। এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ স্বজনরা।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রূপগঞ্জের রপসী এলাকার অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া গাজী টায়ার কারখানায় এলাকা মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের হাড় নিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে আবার ভারী হয়ে ওঠে।
স্বজনরা জানায়, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের নাম-পরিচয়ের তালিকা করা হয়। পরবর্তিতে সেটা অস্বীকার করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এরপর ছাত্ররা এসে ১২৮ জনের নাম লিপিবদ্ধ করে। তৃতীয় দফায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে চাইলে ক্ষুব্ধ হয় স্বজনেরা। এক পর্যায় তারা কারখানার সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে। এতে স্বজনদের বুঝিয়ে শুনিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে নিখোঁজদের সন্ধানে পুড়ে যাওয়া ভবনে বেশ কয়েকজন স্বজন ঢুকে পড়েন। সেখান থেকেই বেশ কয়েকটি মাথার খুলি ও হাড়গোড় পেয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।
আহাজারি করে রমজান নামে একজন স্বজন বলেন, ‘ওরা খালি মানুষ ঢুকাইয়া আগুন দিয়া তালা মাইরা রাখসে। আমি লগে লগে আইসি আমার সন্তানের জন্যে, আমার সন্তানরে দেখতে পারলাম না। আমার সন্তনের ১৫ বছর বয়স।’তার এই সন্তানের নাম শাহা পরান বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, আজ আমরা নাম-পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে যাইনি, শুধু বক্তব্য শুনতে গিয়েছিলাম। সেই প্রেক্ষিতে ৮০ জনের বক্তব্য শুনেছি। সেখানে স্বজনেরা একটু ক্ষুব্ধ হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছিলো তবে তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে গণশুনানি করতে গিয়েছিলেন। নিখোঁজদের স্বজনেরা সেখানে এসে তাদের বক্তব্য দিয়েছে। তবে তাদের ভিতরে এক প্রকার আবেগ কাজ করে। তারা মহাসড়ক অবরোধ করে দাবি করে সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তারা ঢুকে উদ্ধার করবে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেই। তবে যারা বলছে যে মাথার খুলি ও হাড় পেয়েছে, সেটা আসলেও হাড় কিনা তা বোঝার উপায় নেই।
প্রসঙ্গত, অগ্নিকাণ্ডের পর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তিতে ২৮ আগস্ট বিকেলে জেলা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে ভবন পরিদর্শনে আসে তদন্ত কমিটি। পরিদর্শন শেষে ৪, ৫ ও ৬ তলার ফ্লোরটি ধসে যাওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রম সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন হামিদুর রহমান। প্রয়োজনে ন্যাশনালি সাপোর্টের জন্য সুপারিশ জানাবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি। এরপর গত ২৯ আগস্ট সকালে পরিদর্শনে আসেন বুয়েটের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান। পর্যবেক্ষণ শেষে তিনি বলেন, ‘ভবনটিতে প্রবেশ করে উদ্ধার কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক’। একই দিন ভবনের নিচতলার বেইজমেন্টে ড্রোনের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তির অস্তিত্ব পায়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।