নোয়াখালীতে জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালের ইসিজি রুমের টেকনিশিয়ান এক নারীকে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ নেতা আজহার উদ্দিন রাব্বি। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় জনতা অভিযুক্ত রাব্বিকে পিটুনি দেয়। এক পর্যায়ে সদরের সুধারাম থানা পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে ইসিজি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করে আসছেন তিনি। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাব্বি তার এক বন্ধুকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে রাব্বি নিজেকে হাসপাতালের সাবেক মার্কেটিং বিভাগের লোক বলে পরিচয় দেন।
সে হিসেবে রাব্বির সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিন্তু ইসিজি রুমে যখন কোনো লোকজন ছিল না, তখন রাব্বিকে বের হয়ে যেতে বলেন ভুক্তভোগী। কিন্তু রাব্বি বের না হয়ে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। নিজেকে বাঁচাতে নানা চেষ্টার এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি।
ততক্ষণে হাসপাতালের অন্য কর্মচারীরা বিষয়টি টের পান। ঘটনা বাইরে জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত রাব্বিকে পিটুনি দেয়। পরে সুধারাম থানার পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে রাব্বিকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ওই নারী প্রথমে মামলা করবেন বললেও পরে আর মামলা করেননি।
থানার মাধ্যমে সমঝোতা করেছেন। ফলে মুচলেকা নিয়ে অভিযুক্ত রাব্বিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জাপান-বাংলাদেশ হাসপাতালের পরিচালক শামীম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানার পর ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভুক্তভোগী নিজের পরবর্তী নিরাপত্তার কথা ভেবে মামলা করেননি। বিষয়টি থানার ওসির মাধ্যমে সমাধান করেছেন।’
কেন কোনো আইনি ব্যবস্থান নেননি, এমন প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘আমাকে সহযোগিতা করার মতো বাপ-ভাই কেউ নেই। এই চাকরি দিয়ে আমার পরিবার চলে। মামলা করতে গিয়ে যদি ঝামেলায় পড়ি বা পরবর্তীতে আরো ঝামেলা নেমে আসে, এ জন্য থানার মাধ্যমে সমঝোতা করেছি।’ এ ঘটনায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও জানান ওই ভুক্তভোগী।
জানা যায়, অভিযুক্ত আজহার উদ্দিন রাব্বি সুবর্ণচর উপজেলার ৫ নম্বর চর জুবলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি। রাব্বির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতিসহ নানা অপকর্মের একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে এক ডাক্তার দম্পতির বাসায় চুরির মামলায় ২ মাসের বেশি সময় কারাভোগ করেন এ ছাত্রলীগ নেতা। কারাগার থেকে বেরিয়ে সুবর্ণচর ছেড়ে জেলা শহর মাইজদীতে ওঠেন রাব্বি। মাইজদী এসে স্থানীয় পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ্ খান সোহেলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আবারও অপরাধে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আজহার উদ্দিন রাব্বি জানান, তাকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ওই নারী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলো করেছে। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ছাড়া পান তিনি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।