মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল মুক্তিযুদ্ধে ২৫ জুন ১৯৭১ সালে ডুমাইন অপারেশনের সময় শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন মল্লিক। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার ভাতার টাকা আপন তিন ভাইয়ে জালিয়াতীর মাধ্যমে আত্নসাত করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিয়ারা গ্রামের মৃত সোনাউল্লাহ মল্লিক ও মা আমেনা বেগমের সেজো পুত্র মোক্তার হোসেন মল্লিক।
তার স্বজনরা জানান, শহীদ মোক্তার বিবাহিত না হওয়ায় ভাতার টাকা পেতেন তার পিতামাতা। পিতার মৃত্যুর পর তার মা ওই ভাতার টাকা পেতেন। পরে পহেলা আগষ্ট ২০১২ সালে মায়ের মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হিসেবে আপন তিন ভাই আব্দুস সাত্তার মল্লিক, মো. আতিয়ার রহমান মল্লিক ও মো. আবু বক্কার মল্লিকসহ তাদের তিন বোন লাইলি বেগম, সোভা বেগম ও দোলেনা খাতুন টাকা পাবে। কিন্তু কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি ও চক্রান্ত করে বড়ভাই সত্তার মল্লিক তিন বোনকে ফাঁকি দিয়ে নিজেদের নামে একাউন্ট করে ওই ভাতার টাকা উত্তোলন করে তা আত্নসাত করে আসছে বলে অভিযোগ করেন তিনবোন।
কাগজপত্র ও অভিযোগসূত্রে জানা যায়, কাগজপত্রে তার মায়ের মৃত্যুর তারিখ পরিবর্তন করা, ওয়ারিশ হিসেবে এফিডেভিট কাগজে তিন বোনের স্বাক্ষর নকল করাসহ ওই টাকা বোনদের ভাগ দিবে বলে কৌশলে নিজের নামে একাউন্ট করে টাকা তুলে আসছে। এসব জালিয়াতির হাত থেকে রক্ষা পেতে ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্য টাকা বুঝে পাওয়ার জন্য ভুক্তোভোগী তিন বোন লাইলি, শোভা ও দোলেনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করাসহ আদালতে মামলা করেন।
এফিডেভিট কপিতে স্বাক্ষরকারী মাগুরা জজ কোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, এফিডেভিট কপিতে উল্লিখিত প্রথমপক্ষ ও দ্বিতীয় পক্ষের কেউ তার সামনে আসেননি। এগুলো ভুয়া ভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগের ভিত্তিতে সত্তার মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে সিস্টেম প্রসেস করে তিনি তার নামে একাউন্ট করে টাকা উত্তোলন করেন এবং দুই ভাইকে টাকার কিছু অংশভাগ দেন বলে স্বীকার করেন। কিন্তু বোনদের টাকার ভাগ কেনো দেওয়া হতো না এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এছাড়াও বোনেরা টাকা দাবি করায় বিভিন্ন সময়ে হুমকি ও হামলা করে সত্তার মল্লিকের ছেলে ও তার লোকজন। এঘটনা জানতে গেলে দোলেনার স্বামী মিঠু মোল্যার উপর হামলা হয়। পরে মিঠু মোল্যা বাদি হয়ে মাগুরার আদালতে মামলা করেন।
এঘটনায় স্থানীয় কাদিরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব খান জানান, বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর উপস্থিততে কয়েকবার মিমাংশার জন্য সালিশও হয়েছে। সুরাহার জন্য কোনো ভাই আগ্রহ দেখায়নি। তবে এভাবে ওয়ারিশ ফাঁকি দিয়ে টাকা তুলে আত্নসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
কাদিরপাড়া ইউনিয়ন মুক্তযোদ্ধা কমান্ডার বীর-মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু বক্কার মোল্যা জানান, তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন এবং ভুক্তোভগী তিন বোনকে শিগগিরই তাদের ভাতার টাকা বুঝে দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।
ভুক্তভোগী লাইলি-শোভা ও দোলেনা অভিযোগ করে বলেন, এই চক্রান্তের মূলহোতা তাদের বড়ভাই আব্দুস সত্তার মল্লিক ও সাত্তারের বড়ছেলে মিজানুর মল্লিক। সুরাহা পেতে মাগুরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ সবার প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।