সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : বাঁশ, কাঠ, লোহার ফ্রেমে তৈরি ছোট্ট ঘরের চারদিক বাঁশের চাটাই দিয়ে দেয়া হয়েছে বেড়া। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এটি একটি আধুনিক আলু সংরক্ষণাগার। যার ভিতর কাঠের তৈরি একাধিক ড্রয়ারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৬ টন আলু।
কোন প্রকার খরচ ছাড়াই কৃষকরা সহজেই এখানে দীর্ঘদিন আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ব্যতিক্রমী এমন সংরক্ষণাগার ইতোমধ্যে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু চাষাবাদ হয় উল্লাপাড়ার মোহনপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুরসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে। তবে মৌসুমের সময় আলু তোলার পর তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ সুবিধা না থাকায় বাধ্য হয়ে অল্পদামে বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে আলু বীজ সংরক্ষণ করতে না পেরে চাষাবাদের শুরুতেই সমস্যায় পড়েন কৃষকরা।
ফলে এখানকার উর্বর জমিতে আলুর বাম্পার ফলনেও কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হতে পারেন না। এ সমস্যা সমাধানে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত বছর গ্রামের ৩০ জন কৃষককে কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পে আলু চাষাবাদ, সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন।
এই প্রকল্প থেকে মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের বাড়িতে একটি প্রাকৃতিক আলু সংরক্ষণাগার তৈরি করে দেয়া হয়। মেঝে পাকা করে ঘরটির চারদিকে বাঁশের চাটাই দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে। লোহার ফ্রেমের উপর টিনের ছাউনি দেয়া হয়েছে। বেড়ার উপরে চারদিকে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভিতরে একটি সাধারণ বাল্ব আর ফ্যান ছাড়া কিছুই নেই। ঘরের ভিতর কাঠের তৈরি তাকে ২৪টি ড্রয়ার, যার একেকটির ভিতর ১০ মণ করে আলু সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি ড্রয়ারের উপর আলু রাখা কৃষকের নাম পরিচয় লিখে রাখা হয়েছে। এভাবে এখানে আলু তোলার পর থেকে তিনমাস পর্যন্ত সংরক্ষণ রেখে কৃষকরা বিক্রি এবং হিমায়িত কোল্ড স্টোরেজে নিয়ে যায়।
মৌসুমের সময় এখানে আলু সংরক্ষণ করে পরবর্তী সুবিধা মতো সময়ে কৃষকরা তা বাড়তি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। এখানে আলু রাখলে তা পঁচা বা নষ্ট হয়না। এমন পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের কোন প্রকার খরচই হচ্ছে না। শুধু আলু নয়। কন্দাল জাতীয় ফসল যেমন পেঁয়াজ, রসুন, আলু, আদা, হলুদ, মরিচসহ বিভিন্ন পণ্যও সংরক্ষণ করে বছরজুড়ে রেখে কৃষকরা বিক্রি করে লাভবান হতে পারবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি জানান, কন্দাল জাতীয় ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই আলু সংরক্ষণাগার তৈরি করে দেয়া হয়েছে। যা ব্যবহার করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই সংরক্ষণাগারে যেমন ফসল পঁচা থেকে রক্ষা পাবে, তেমনি এর মাধ্যমে বছরজুড়ে বাজারে মিলবে আলুসহ কান্দাল ফসল। কৃষকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে এমন আরো সংরক্ষণাগার তৈরির জন্য সুপারিশ করবো।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।