সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : পবিত্র রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে বগুড়া সারিয়াকান্দির পৌর এলাকার শিল্পপাড়ায় বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। বাঁশের তৈরি সেমাইয়ের খাঁচা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। প্রতিদিন ৩ হাজার খাঁচা বিক্রি হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে বিপাকে এলাকাবাসী।
শিল্প পাড়া নামে পরিচিত সারিয়াকান্দির পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি গ্রাম। এখানে আদিকাল থেকেই বিভিন্ন ধরনের বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করেন এ গ্রামের নারী পুরুষ এবং শিক্ষার্থীরা। এ গ্রামের প্রায় ৩শ’টির বেশি পরিবার তাদের বাপ দাদাদের এ ব্যবসা ধরে রেখেছেন।
বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের মধ্যে ঘরের ছাদ, সেমাইয়ের খাঁচা, চাটাই, ধান রাখার গোলা, ঘাসের খাঁচা, মুরগির খাঁচা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তবে সব কাজ বাদ দিয়ে আসন্ন রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে এখন সেমাইয়ের খাঁচা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ পাড়ার বাঁশের কারিগররা। কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বাঁশ থেকে চিকন সুক্ষ্ম আকারের তেমাল তুলছেন, কেউবা আবার করছেন খাঁচা তৈরি।
বাঁশের তৈরি সেমাইয়ের খাঁচা তৈরির জন্য প্রথমে তরলা বা মাকলা বাঁশ বাজার বা বিভিন্ন গ্রাম থেকে কিনে নিয়ে আসা হয়। এরপর বাঁশগুলোকে বাঙালি নদীর পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। কয়েকদিন ভিজিয়ে রাখার পর সিজনিং হওয়া বাঁশ পানি থেকে তুলে নিয়ে এসে তেমাল তোলা হয়। তারপর সেই তেমাল দিয়ে তৈরি করা হয় সেমাইয়ের খাঁচা। এ কাজে গ্রামের নারীরা খুবই পারদর্শী।
সেমাইয়ের খাঁচার তেমাল বুননে এ গ্রামের শিক্ষার্থীরাও বেশ পটু। প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে তারা ৩ টাকা করে পায়। তবে বাঁশের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে খাঁচার দাম তুলনামূলকভাবে কম পাওয়ায় ভাল নেই এ পাড়ার শিল্পীরা। শুধুমাত্র নিজেদের বাপ দাদাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এ কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন কারিগররা।
এই কাজের সাথে যুক্ত বাল্য বিয়ের শিকার জোসনা বেগম (৩০) জানান, গত কয়েকবছর ধরে তার স্বামী কোনও খরচপত্র দেয় না এবং কাজকর্ম করে না। তাই জোসনা এখন তার বাবার বাড়িতেই থাকেন। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত করেন সেমাইয়ের খাঁচা তৈরির কাজ।
এ কাজে তার বড় মেয়ে তাকে সহযোগিতা করে। স্কুল বন্ধ থাকায় তার ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়েও একমনে তেমাল বুনছে খাঁচা তৈরিতে। তিনি বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে এ কাজ করে সংসার চালাতে খুবই হিমশিম খাচ্ছি। খাঁচা বিক্রির পাইকারি ব্যবসায়ী সায়জল জানান, প্রতিটি খাঁচা তিনি ২৫ টাকা করে কারিগরদের কাছে থেকে কেনেন।
এরপর এগুলো ভটভটি বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সেমাইয়ের কারখানায় সরবরাহ করেন। এভাবে প্রতিদিন তিনি ২৫০০ থেকে ৩০০০ খাঁচা সরবরাহ করেন। সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র মতিউর রহমান মতি বলেন, সারিয়াকান্দি শিল্পপাড়ার শিল্পীদের নানা বিষয়ে তাদের সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। তবে এ শিল্প প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে।
দীর্ঘদিন ধরে হিন্দুকান্দি গ্রামের এ পাড়ার মানুষরা বাঁশের তৈরি এ শিল্পকে ধরে রেখেছেন। তারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেন। পৌর এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আইইউজিআইপি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে শিল্পপাড়ার বাঁশ শিল্পীরা এর সুফল পাবেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।