নাটোর ও গুরুদাসপুর প্রতিনিধি : নাটোরের গুরুদাসপুরে নিখোঁজের দুই বছর পর মফিজুল ইসলাম নামে এক যুবককে খুনের ঘটনা প্রকাশের পর তার মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়। আজ রোববার (৩ মার্চ) আদালতের নির্দেশে গুরুদাসপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাকিলের উপস্থিতিতে উপজেলার চাঁচকৈড় এলাকার একটি মহিলা মাদরাসার সেপটিক ট্যাঙ্কের পাশে পুঁতে রাখা ওই লাশ উত্তোলন করা হয়।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এটিএম মইনুল ইসলাম,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শরিফুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) আক্তারুজ্জামান, গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহানাজ আলী,ওসি উজ্জল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এই লাশ উত্তোলনের খবর জানতে পেরে শত শত উৎসুখ মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করে। এর আগে খুনের ঘটনা প্রকাশ ও নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার থেকে মফিজুলের মৃতদেহ পুঁতে রাখা স্থানসহ সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। এছাড়া এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব- ৫ এর একটি দল শনিবার সিরাজগঞ্জের গোলচত্বর এলাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহল্লার মাফিজুল ইসলাম (২৫) নিখোঁজ ছিলেন। দু’বছর পর জানা যায় তাকে খুন করা হয়েছে। তার মৃতদেহ উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া এলাকার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাঙ্কের পাশে পুঁতে রাখা হয়। অন্য একটি মামলায় কারাগারে আটক আল হাবিব সরকার (৩৫) নামে এক আসামি জাকির মুন্সি (৪০) নামে তার এক হাজতি বন্ধুর কাছে মফিজুলকে খুন করার গল্প শোনায়।
ওই হাজতি জামিনে ছাড়া পেয়ে মফিজুলকে খুন করার বিষয়টি নিহতের পরিবারকে জানালে তারা থানা পুলিশের আশ্রয় নেন। শুক্রবার রাতে নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদি হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা(৫৫), তার মেয়ে তানজিলা খাতুন (২৮), তার স্বামী আল হাবিব সরকার (৩৫) ও তাদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (৪২) গ্রেফতার করে র্যাব ও পুলিশ। পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন ও তার বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করে তারা।
এ মামলায় আটক চারজনসহ আরও ৩ থেকে ৪জনকে সন্দেহভাজন আসামি করা হয়েছে। এর আগে এহত্যাকান্ড নিয়ে র্যাব ৫ এর নাটোর ক্যাম্পের পক্ষে পাঠানো প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা গেছে, নিহত মাফিজুল ইসলাম ও তানজিলা খাতুন খলিফাপাড়া মহল্লার একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করার সুবাদে তদের মধ্যে প্রেম ও প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এনিয়ে তানজিলা-আল হাবিব দম্পত্তির মাঝে কলহ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তানজিলার বাবার কাছে অভিযোগ করেন জামাতা।
এঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তানজিলার বাবা ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কৌশলে মাফিজুলকে তার বাসায় ডেকে নেয়। গভীর রাতে সেখান থেকে আবু তাহের খলিফা তার কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে মফিজুল ইসলামকে হাত-পা বেঁধে ও মুখে কচটেপ দিয়ে আসামিরা হত্যা করে। পরে প্লস্টিকের বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখে বলে আসামিদের বরাত দিয়ে জানায় র্যাব।
এদিকে ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় মাফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় ২০২২ সালের ৭ মে একটি জিডি (নম্বর (২৮৪)জিডি করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।