জোড়ালো অভিযান নেই
স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরে রমজানের বাজার করতে আসা মানুষের টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিতে সক্রিয় প্রায় ২শ’ পকেটমার। এদের খপ্পড়ে পড়ে প্রায় প্রতিদিনই কারো না কারোর খোঁয়া যাচ্ছে টাকাসহ মানিব্যাগ বা মোবাইল ফোন।
সংঘবদ্ধ পকেটমার চক্রের সদস্যদের হাতে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা ও নিউ মার্কেট, ফতেহ আলী ও রাজা বাজারে পকেটমারদের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। শহরের সাতমাথায় শিশু ও কিশোর ও বৃদ্ধ পথচারীদের সাথে পিছু নেয় পকেটমাররাও। রাস্তা পারাপারে ব্যস্ততার সুযোগে পথচারীদের পকেট ফাঁকা করে দিয়ে সটকে পড়ে পকেটমারা।
সাতমাথায় যারা পকেট মারে তাদের অধিকাংশই কিশোর। তাদের হাতে থাকে ব্লেড। পথচারীদের পকেট কেটে টাকা হাতিয়ে নেয়াই তাদের কাজ। শুধু সাতমাথা ও তার আশপাশ এলাকায় এভাবে চষে বেড়ায় ২০-৩০ জন পকেটমার। খোঁদ পুলিশ সূত্রেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে, পকেটমার চক্রের বিরুদ্ধে সদর থানার পুলিশের অভিযানও শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন পকেটমার। তারপরও ভুক্তভোগীরা মনে করেন পকেটমারদের বিরুদ্ধে পুলিশের আরও জোড়ালো অভিযান প্রয়োজন।
ঈদ যতই এগিয়ে আসবে ততই পকেটমারদের তৎপরতা আরও বাড়বে। তাই পকেটমারদের গ্রেফতার করা জরুরী। অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ায় সান্দারপট্টিতে হলো পকেটমারদের সদর দপ্তর। সেখানেই বাস করে প্রায় দেড়শ’ পকেটমার।
সেখানে পকেটমারদের ট্রেনিংও দেয়া হয়। এ ছাড়াও ফুলবাড়ি, বগুড়াপাড়া, তিনমাথা কাটনাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানেও বসবাস করে পকেটমারদের একটা অংশ। পকেটমারদের একাধিক সর্দার রয়েছে। সর্দাররা পকেটমারতে তাদের বিচিত্র কায়দা শেখায়, বিচিত্র নাম দেয়। হরেক নামে ডাকে।
এর মধ্যে কোন কোন পকেটমারের নাম যেমন মিরপুর, ছক্কা, ভোট, বড় বুদো প্রভৃতি। ইতিপূর্বে তারা ধরাও পড়েছে। সদর থানায় অপরাধ ফাইলের বোর্ডে তাদের ছবি টানানো রয়েছে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সান্দারপট্টিতে কিভাবে পকেট মারতে হয় তা শেখায় ওস্তাদরা। বছর জুড়েই তারা বগুড়া শহর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পকেটমারি করে মানুষের টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয়।
ঈদের সামনে তাদের তৎপরতা আরও বাড়ে। সংঘবদ্ধভাবে হাত বদলের মাধ্যমে পকেট মারতে পছন্দ পকেটমাররা। প্রথমে একজন পকেটমার মার্কেটে ক্রেতার কাছ থেকে টাকা, মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন বা ভ্যানিটি ব্যাগ হাতিয়ে নেয়। এরপর সেই মালামাল হাত বদলের মাধ্যমে ২য়, ৩য় ও চতুর্থ জনের হাত হয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
যে কারণে প্রথম জন ধরা পড়লেও সহজে খোঁয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার হয়না। দিন থেকে রাত অবধি পর্যন্ত পকেটমারি করে বাড়ি ফিরে তারা ওস্তাদের কাছে যায়। সেই ওস্তাদ হাতিয়ে নেয়া সিংহভাগ টাকা ও মালামাল নিজের কাছে রেখে দিয়ে বাকিটা তাদের দেয়। এ ক্ষেত্রে সমান ভাগ না পেলেও অখুশি হয়না পকেটমাররা। কারণ গ্রেফতার হলে বা মামলায় পড়লে ওস্তাদরাই ফাঁড়ি বা জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়,পকেটমারদের প্রধান হাতিয়ার ব্লেট। এই ব্লেট ব্যবহার করেই বেশি পকেট কাটে। তারা বিশেষ কায়দায় মুখের মধ্যে ব্লেট রাখে। আবার জনগণের হাতে ধরা পড়লে সেই ব্লেট দিয়ে নিজের জিব্হা কেটে রক্তাক্ত করে। তা দেখে অনেক সময় জনতা পকেটমারকে ছেড়েও দেয়।
শহরের সাতমাথা, নিউ মার্কেট, ফহেত আলী বাজার, রাজা বাজার ছাড়াও হকার্স মার্কেট, চাঁদনী বাজার, দত্তবাড়ী, চেলোপাড়া ব্রীজ এলাকা, চারমাথা কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল, বগুড়া রেল স্টেশন, আন্ত:থানা বাস টার্মিনাল এলাকা হলো পকেটমারদের প্রধান প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র। তবে শহরের সাতমাথা এলাকায় এরা বেশি থাকে।
সাতমাথায় রাস্তা পার হতে গেলে পকেটমাররা একসাথে পার হতে যায়। যখন পথচারী যানবাহনের গতিবিধি রেখে রাস্তা পার হতে যান তখনই ‘ঝোপ বুজে কোপ মারে’ পকেটমাররা। পথচারীর অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে তারা পকেট ফাঁকা করে। এ ছাড়া তারা ডাকঘর, ব্যাংক, বীমা অফিস, হাট বাজার, বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক সহ আদালত পাড়াসহ কমপক্ষে বিভিন্ন স্থানে স্থানে এ সব পকেটমার সদস্যরা সক্রিয় থাকে।
ফলে তাদের খপ্পড়ে পড়ে সর্বশান্ত হন সর্বসাধারন । নিমিষে হাত থেকে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে ব্যাগ,পকেট থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে মানি ব্যাগ মোবাইল সেট,কেনাকাটা করা ব্যাগ। এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ইনসপেক্টর (তদন্ত) মো: শাহিনুজ্জামান বলেন, পকেটমারদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন পকেটমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের এই অভিযান চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।