স্টাফ রিপোর্টার : বিলাসী তালিকার মধ্যে এনে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে বিদেশি বা আমদানিকৃত ফল এখন ধনীদের পাতে। উচ্চ বিত্তরা যখন আপেল, আঙ্গুর, নাশপাতি আর আনার দিয়ে তাদের ইফতারি সারছেন, তখন দেশি ফলে তৃপ্তি খুঁজছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। তবে এবারের ইফতারিতে দেশি ফলও এখন সাধারণ রোজাদারের নাগালের বাইরে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাইদুর রহমান। সীমিত আয় দিয়ে উচ্চমূল্যের এই বাজারে কোনমতে সংসার চালান তিনি। পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ায় নিয়মিত বাজার তালিকার সঙ্গে যোগ হয়েছে ইফতার। ইফতারের আয়োজনে পরিবারের সদস্যদের একটু ফলমূল খাওয়াতে চান তিনিও। কিন্তু বাজারে ফলের যে চড়া দাম তাতে করে পরিবারের ইফতারিতে প্রতিদিন কলাও জুটবে কি না ভাবছনে তিনি।
বগুড়া শহরের কাঠালতলার ফুটপাতে কলার হালি নিয়ে দরদাম করছিলেন তিনি। এসময় আক্ষেপের সুরে বলেন, তেলে ভাজা পদের সাথে মুড়ি দিয়ে ইফতারি করছি। আড়ইশ’ টাকা কেজি কমে কোন বিদেশি ফল মেলে না। রোজায় কলারও যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে আমাদের মতো মানুষের জন্য দেশি ফলও না। এগুলো এখন ধনীদের খাবার।
বরই কিনতে এসে নূর হোসেন বলছেন, ক’দিন আগেও বরইয়ের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা এখন দাম চাচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কয়েক দোকান ঘুরেও কোথাও আগের দামে বরই পাচ্ছি না। নিত্যপণ্যের বাজারের পর এখন এসবের দামও লাগামহীন। দেশের সব সযোগ-সুবিধা বড়লোকের, আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য কেউ ভাবে না। এসব নিয়ন্ত্রণে কাউকে দেখাও যায় না।
উচ্চ শুল্ক আরোপে বিদেশি ফল অনেক আগেই সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। যেসব মৌসুমী দেশি ফল সাধারণ মানুষ কেনে, রমজান মাসে এখন এসব ফলের দামও লাগামহীন। বাজারে যেসব দেশি ফল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর দামও নাগালের বাইরে চলে গেছে।
ফলের পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিতে উচ্চ শুল্ক এবং ডলার সংকটে এলসি জটিলতা থাকায় বিদেশি ফলের দাম বেশি। খেজুরসহ অন্যান্য ফলকে বিলাসী তালিকায় ফেলে উচ্চ শুল্ক আরোপ করায় এর দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বগুড়া শহরের বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সারা বছরই পাওয়া যায় কলা। রোজার আগেও প্রতি হালি কলা ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় পাওয়া গেলেও রোজার শুরুতে পাল্টাতে শুরু করে চিত্র। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও হঠাৎ-ই প্রতি হালি কলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত। কোন কোন বিক্রেতারা কলা আকারে একটু বড় হলেই দাম চাচ্ছেন ৫০ টাকা হালি।
খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, রোজার আগে প্রতিকাঁদি কলা কৃষকের জমি থেকে ৩শ’ থেকে আকারভেদে ৪শ’ টাকায় কিনলেও বর্তমানে কৃষরাও দাম চাচ্ছেন ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও দেশি ফলের মধ্যে পাকা পেঁপেঁর কেজি ৪০/৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
রোজার আগে বিভিন্ন জাতের বরই ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেয়ারার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও রমজানের পর কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
পেয়ারার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি মোকামে টাকা দিয়েও চাহিদামত পেয়ারা পাওয়া যাচ্ছে না, যা পাওয়া যাচ্ছে তাও আবার প্রতিযোগিতা করে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ইফতারিতে বেলের শরবতে তৃপ্তি মেটাতে চাওয়াও মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোজার শুরুতেই আকারভেদে প্রতিটি বেলে দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত।
৫০ টাকার বেল দাম বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে বিক্রি হতে দেখা যায়। আনারসের কেজিতেও ১০ পর্যন্ত বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। রোজার আগেই বাজারে এসেছে তরমুজ।
রোজার আগে ৫০ টাকা কেজির তরমুজ ইফতারিতে চাহিদা বাড়ায় দামও কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রির নিয়ম থাকলেও বর্তমানে ছোট আকারের একেকটি তরমুজের দাম পড়ছে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত। বেড়েছে ডাবের দামও। আকারভেদে প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। কোন কারণ ছাড়াই প্রতিটি ডাবে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
বিভিন্ন পর্যায়ের খুচরা ফল ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, রমজান মাস হওয়ায় মানুষের ফল কেনার চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে পাইকারি মোকামে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকে বেশি দামে কিনে খুচরা পর্যায়ে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।