সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি : সারিয়াকান্দি কুতুবপুর ইউনিয়নে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করে সফল হয়েছেন তরুণ উদ্যোক্তা মমিনুর রহমান মোমিন। নিজের জমিতে নিজের উদ্যোগে তৈরি করছেন গুড়। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ১১০ শতক জমিতে ১৫ হাজার আখের চাষে সফল হয়ে তিনি তার আরও ৩ একর জমিতে এ জাতের আখ চাষের স্বপ্ন দেখছেন। ৩০ শতক জমির আখ মাড়াই করে ৪ টনের বেশি গুর উৎপাদন।
ক্ষেতের উত্তর পশ্চিম কোণে বসানো হয়েছে সকল প্রকার গুড় তৈরির যন্ত্রপাতি। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে সেখানে আখ মাড়াইয়ের কাজ করছেন স্থানীয় চাষিরা। মাড়াই শেষে সেখানেই তৈরি করা হছে আখের গুর। গ্রামে এই প্রথম গুর মাড়াইয়ের দৃশ্য দেখতে ভীর করেছেন কোমলমতি শিশুসহ সব বয়সি নারী-পুরুষ। সেখানে জমি থেকে আখ কর্তন করে তা থেকে মেশিনে রস বের করা হয়।
এরপর রসগুলো ছেঁকে কড়াইয়ে জাল করা হয়। জাল করার সময় এগুলো ভালো করে ফেটানো হয়। জাল করতে করতেই একসময় আখের রসগুলো গুড়ে পরিণত হয়। এমন চিত্র উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নিউ কাজলা গ্রামে। এখানে ফিলিপাইন জাতের আখ চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মোমিনুর রহমান মোমিন। মোমিনের ক্ষেতে উৎপাদিত ৪’শ পিচ আখও নেয়া হয়েছে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রে। আইটি সেক্টরে লেখাপড়া শেষে চাকরির পিছে না ছুটে কৃষির প্রতি ঝুঁকে পরেন মোমিনুর।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বেসরকারি (প্রাইম এশিয়া) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (আইসিটি) বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে করোনাকালিন তিনি বাড়িতে চলে আসেন। তিনি একজন কৃষকের সন্তান তাই কৃষিতে মনোনিবেশের ভাবনা থেকে এ পেশায় এসেছেন। বাড়িতে ফিরে ইউটিউব ঘেঁটে ফিলিপাইন জাতের উচ্চ ফলনশীল কালো আখ চাষ শুরু করেন।
তিনি তার নিজস্ব জমিতে চাষ করেছেন আখ। কালো জাতের আখ সুমিষ্ট ও ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হওয়ায় আশপাশের চাষিরাও এ জাতের আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আখগুলোর বাইরের অংশ দেখতে কালো খয়েরি। লম্বায় সাধারণত ১৪ থেকে ১৫ ফুট। দেশিয় আখের মতো হলেও এর আছে বেশ কিছু ভিন্নতা। এই আখের কান্ড কিছুটা নরম, রস বেশি, মিষ্টিও বেশি, চাষের পর লাভও বেশি।
এসব কথা ভেবেই অনেক চেষ্টার পর ফিলিপাইনের কালো জাতের আখ চাষ করেছেন মোমিন। প্রাথমিকভাবে তিনি তার ১১০ শতক জমিতে ১৫ হাজার আখের চাষ করেছেন পরীক্ষামূলকভাবে। ১১০ শতক জমির মধ্যে তিনি ৩০শতক জমির আখ কর্তন করে তা থেকে ৪ টনের বেশি গুড় উৎপাদন করেছেন। এরপর তিনি বাণিজ্যিকভাবে তার ৩ একর জমিতে এ জাতের আখের চাষ করার স্বপ্ন দেখছেন।
মোমিন জানান, করোনাকালিন সবকিছুই যখন স্থবির হয়ে পড়েছিল, ঠিক তখনও কৃষিক্ষেত্র সচল ছিল। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে পণ্য সরবরাহ করেছেন। তাই তিনি লেখাপড়া শেষে চাকরির পিছে না ছুটে কৃষিক্ষেত্রে নেমেছেন। কৃষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গা থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে চারা সংগ্রহের পর শুরু করেছেন ফিলাপাইন জাতের আখ চাষ।
এখন তার খামারে দৈনিক ৭ থেকে ৮ জন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তার উৎপাদিত আখ থেকে খাঁটি গুড় তৈরি করা হচ্ছে এবং নিজের নার্সিংকৃত চারা স্বল্পমূল্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কারিগর ইমাম হোসেন জানান, ‘পূর্বে বিভিন্ন জাতের যে আখ দেখেছেন তার থেকে ফিলিপাইনের জাতের আখটি ভিন্ন। এ জাতের আখের রস বেশি এবং মিষ্টিও বেশি। একটি আখ থেকে প্রায় ৩লিটার রস পাওয়া যায়। এতে দেখা যায় ১৮ লিটারের রস থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ কেজির মতো গুড় উৎপাদন করা যাচ্ছে, যা খুবই দানাদার ও মিষ্টি।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, সারিয়াকান্দিতে এই প্রথম ফিলিপাইন জাতের আখের চাষ শুরু করেছেন কৃষক মোমিন। সেখানে নিজেই তিনি গুর উৎপাদন করছেন।
যা সম্পূর্ণ নির্ভেজাল। যাদের লিভার এবং জন্ডিসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য আখের রস খুবই উপকারী। আখে কিছু ফাইবার রয়েছে যা মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাছাড়া এ রমজানে ইক্ষুর রস মানুষের শরীরকে রসালো রাখে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।