স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া জেলার সাত উপজেলায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের আলু সংরক্ষণে ৪০টি অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করছে সরকার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে আলুর বহুমুখী ব্যবহার সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি আড়াই লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে জেলার তিনটি উপজেলায় ১৯টি অহিমায়িত আলু সংরক্ষণাগার (মডেল ঘর) নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এরমধ্যে বগুড়া সদর উপজেলায় ৭টি, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৬টি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৬টি মডেল ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এসব আলু সংরক্ষণাগার নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে প্রতিটিতে ৩০ জন করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আলু চাষী বিনামূল্যে বস্তা ছাড়াই ১ টন করে এবং জেলায় ৪০টি সংরক্ষণাগারে মোট ১২শ’ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
নির্মাণাধীন অন্য ২১টি আলু সংরক্ষণাগারের মধ্যে শাজাহানপুর উপজেলায় ৬টি, নন্দীগ্রাম উপজেলায় ৬টি, কাহালু উপজেলায় ৬টি ও আদমদিঘী উপজেলার ৩টি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পরিমানে আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। ফলে আলুর উৎপাদন মৌসুমে তাদের আলু সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেক আলু চাষী জমি থেকেই আলু বিক্রি করে দেন।
আবার আলুর উৎপাদন খরচ মেটাতে না পেরে নগদ টাকা সংগ্রহের জন্য দ্রুত আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। ফলে তারা আলুর ন্যায্য মূল্য ও লভ্যংশ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। এরপর আলু চলে যায় কোল্ড স্টোর সিন্ডিকেট ও মধ্য স্বত্বভোগীদের হাতে। এরপর তারাই আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ফলে মাঝে মধ্যেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে আলুর বাজার।
এসব অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ও আলু চাষী যাতে তার জমিতে উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পেয়ে লাভবান হতে পারেন এবং সহজেই আলু সংরক্ষণ করতে পারেন সে লক্ষ্যে সরকার দেশের ১৬টি জেলার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ মোট ৭৬টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তাছাড়া আলুর আভ্যন্তরীন চাহিদা সৃষ্টি ও অপচয়রোধে এ প্রকল্পের আওতায় আলুর আনাবিধ ব্যবহার ও পুষ্টিমান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির করতে জনবহুল এলাকায় প্রদর্শনী স্টলের আয়োজন এর মাধ্যমে আলুর মিষ্টি, সিঙ্গারা, পুরি, চমচম, নাগেটস, বুন্দিয়া ও খোরমাসহ ২০ প্রকারের খাবার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ।
সে লক্ষ্যে গৃহিণী পর্যায়ে এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে রন্ধন প্রণালী বিষয়ে ডিওটি প্রশিক্ষণ প্রধান এবং ব্যাপক প্রচারণার জন্য পোস্টার, ফোল্ডার, লিফলেট ও রেসিপি বুক বিতরণের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে আলুর আভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি ও অপচয় রোধ এবং সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সূত্র মতে বাঁশ, কাঠ, ঢেউটিন, সিমেন্টের পিলার কর্কসিট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট প্রস্থ’র আয়তন বিশিষ্ট মডেল ঘরে ৩০ জন আলু চাষী তাদের জমিতে উৎপাদিত ১ টন করে মোট ৩০ টন আলু সংগ্রহ করতে পারবেন। ফেব্রুয়ারি/মার্চ মাস হতে জুন মাস পর্যন্ত চার থেকে পাঁচ মাস সাধারণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় আলু সংরক্ষণ করা যাবে।
জমি থেকে আলু উত্তোলনের পর হিমাগারে মজুদকৃত আলু খালাসের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য হিমাগারে সংরক্ষণ না করে বসতবাড়িতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে উত্তোলন মৌসুম অপেক্ষা বেশি মূল্য পাবে আলু চাষী। ১৫ থেকে ২০ বছর ব্যবহারযোগ্য এসব আলু সংরক্ষণাগার উঁচু ও খোলা এবং আংশিক ছায়ায় যুক্ত স্থানে নির্মাণ করতে হবে। যাতে এখানে স্যাঁৎস্যাঁতে ভাব না থাকে।
তাছাড়া পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। সঠিকভাবে বাছাই করা আলু সংরক্ষণ করতে হবে এসব ঘরে। যেন কাটা, ফাটা, অপরিপক্ক, রোগযুক্ত ও ছাল ওঠা আলু না থাকে। সংরক্ষণাগারে যাতে সূর্যের আলো ও বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসার মমতা হক বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু উৎপাদন হওয়ায় কৃষকের বসত বাড়িতে রাখার জায়গার অভাব ও নগদ অর্থের প্রয়োজনে তারা দ্রুত আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন।
ফলে তারা অনেকটা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। ঘরগুলো নির্মাণ সম্পন্ন হলে কৃষকরা বিনা খরচেই তাদের আলু সংগ্রহ করতে পারবেন। আলু বিক্রি করে দেয়ার পর পিঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া, ভূট্টা, মুখী কচুসহ বিভিন্ন ফসল সংরক্ষণ করা যাবে এসব ঘরে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।